বিশেষ প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে গাড়ি পার্কিংয়ের নামে রমরমা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন সাতক্ষীরা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোন লাভ হয়নি।
জানা যায়, সাবেক এক জনপ্রতিনিধি আস্তভাজন হওয়ায় নুর এন্টারপ্রাইজ টেন্ডারের ম্যাধ্যমে সাইকেল গ্যারেজটি ডাক পান। মেডিকেলে সেবা নিতে আসা রোগী এবং রোগীর স্বজনসহ সকল আগন্তুতকের কাছ মাত্রাতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। একটি মোটরসাইকেল রাখতে ২৫টাকা করে নেওয়া হয়। এছাড়া প্রাইভেটকার ও বাইসাইকেল থেকেও মনগড়া টাকা আদায় করছে সংশ্লিষ্টরা ইজারাদার। বিষয়টি নিয়ে শুধু রোগীর স্বজন ছাড়াও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরাও পড়েছেন ভোগান্তিতে। এসব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।
সাতক্ষীরা মেডিকেল চিকিৎসা নিতে আসা সালাউদ্দীন, মোমিন, আসাদুল ও আমিনুরসহ একাধিক রোগীর স্বজন বলেন, আমাদের রোগী ভর্তি আছে। ওষুধ কিনতে একাধিবার বাইরে যেতে হচ্ছে। প্রতিবার মোটরসাইকেল রাখতে ২৫ টাকা করে দিতে হয়। ৪বার মোটরসাইকেল রাখলে ১০০টাকা চলে যায়। আমরা বিপদে পড়ে এখানে এসেছি। মোটরসাইকেল রাখতেও ব্যবসা এটি অমানবিক ছাড়া কিছু নয়। এছাড়া আরও কয়েকজন রোগীর স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেডিকেলে যে পার্কিং চার্জ নিচ্ছে তা রীতিমতো অস্বাভাবিক। তারা মোটরসাইকেলের পার্কিং চার্জ কমানোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে নূর এন্টার প্রাইজের সত্ত্বাধিকারী নূর মনোয়ার বলেন, মেডিকেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাইকেল, মোটর সাইকেরে পার্কিং ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। আমি দুই বছর টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়েছি। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। সেই মোতাবেক ২৫টাকা নেওয়া হচ্ছে। আগে কত টাকা নেওয়া হতো সেটা আমার জানা নেই। মেডিকেলের গ্যারেজে বিভিন্ন খরচ আছে এবং বর্তমান সকল জিনিসের যে দাম তাতে কমানো কঠিন ব্যাপার। কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্যে পার্কিং ফি নেওয়া হয়। এটি যৌক্তিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিরাপত্তার জন্যে ফি নেওয়া হচ্ছে। অনেকে আছে ২৫ টাকা দিয়ে সারাদিন রেখে যায়। রক্তের ডোনার, সাংবাদিক, পায়ে ভ্যান, দলীয় নেতাকর্মী, পুলিশদের ছাড় দেওয়া হয়।
বন, ভূমি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির জেলা সভাপতি আদিত্য মল্লিক বলেন, মানুষ অসুস্থ হয়ে বা বিপদে পড়ে মেডিকেল যায়। একজন রোগীর লোকের খাবার, ওষুধসহ বিভিন্ন কাজে বের হতে হয়। প্রতিবার মোটরসাইকেল রাখতে ২৫টাকা করে নেওয়া হলে বেসরকারি ক্লিনিকের চেয়ে বেশি খরচ হয়। এটা শ্রেফ অবিচার। সারা দেশের কোথাও মোটরসাইকেল পার্কিং ফি ২৫ টাকা নেই। যেসব প্রতিষ্ঠানে পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে তাদের অধিকাংশই ১০টাকা করে নেয়। আর যারা সকাল-সন্ধ্যা রাখে তাদের ১৫ টাকা দিতে হয়। রোগীর পার্কিংয়ের নিশ্চয়তা দিতে হবে মেডিকেল কর্তৃপক্ষের। সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ খরচ বাবদ কিছু টাকা নিতে পারে। ২৫টাকা ফি নেয় এটা অন্যায়। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার কথা বলেছি। এই বিষয় নিয়ে মেডিকেলের সামনে অনেকবার মানববন্ধন করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। রোগীর লোক ১০টাকায় সারাদিন রাখতে পারে সেই ব্যবস্থা করবে কর্তৃপক্ষ এটাই আমাদের দাবী।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. শীতল চৌধুরী বলেন, সাইকেল গ্যারেজটি টেন্ডারের মাধ্যমে নূর এন্টারপ্রাইকে দেওয়া হয়েছে। আমার যোগদানের আগেই টেন্ডার হয়েছে। কত টাকা নেই সেই বিষয়টি আমার জানা নেই। নূর এন্টারপ্রাইজের ডাকের মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে যখন ডাকা হবে তখন কমানোর সুপারিশ করবো।
Leave a Reply