নিজস্ব প্রতিনিধি : “মাটি: খাদ্যের সূচনা যেখানে” (Soils: where food begins)। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২২ উপলক্ষে সাতক্ষীরায় বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক কার্যালয় সাতক্ষীরা’র আয়োজনে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি সাতক্ষীরা’র উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. জামাল উদ্দিন’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী আরিফুর রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি বলেন, “দেশে যেন খাদ্যের অভাব না দেখা দেয় সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকল অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন। কোথাও যেন ১ ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদী না থাকে। তিনি আরো বলেন, অপ্রয়োজনীয় সার কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারণ অপ্রয়োজনীয় সার কীটনাশক ব্যবহারে দিন দিন মাটি তার উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে। সেকারণে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অঞ্চল ভিত্তিক দেশের সকল এলাকার মাটি পরীক্ষা করে মাটি উপযোগি ফসল উৎপাদন করতে হবে। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষিবিদ ও কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে।”
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় মৃত্তিকা বিজ্ঞানী শামসুন নাহার রত্না বলেন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৮টি জেলার ৯৩টি উপজেলার মাটি ও পানি বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত। ১৯৭৩ সালে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল ৮ লক্ষ ৩৩ হাজার হেক্টর। ২০০০ সালে বেড়ে গিয়ে ১০ লক্ষ ৩৩ হাজার হেক্টরে দাড়িয়েছে এবং ২০১০ সালে লকণাক্ততায় আক্রান্ত জমির পরিমাণ ১০ লক্ষ ৫৬ হাজার হেক্টর। লবণাক্ততার কারণে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শুকনো মৌসুমে কৃষক ভাইয়েরা ফসল আবাদ করতে পারে না। জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ করার ফলে এলাকায় লবণাওতা ক্রমান্ব্যে বৃদ্ধ্বি পাবার অন্যতম একটি কারণ। লবনাক্ততার মান বৃদ্ধ্বির পাশাপাশি জমির উর্বরতার মান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। মুখ্য পুষ্টি উপাদান ঘ, চ, ক, ঝএবং গৌণপুষ্টি উপাদান তহ, ইএর ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৬৮,৭৬০হেক্টর আবাদি জমি অনাবাদি জমিতে পরিণত হচ্ছে। মাটি হলো খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি। সারা পৃথিবীতে মানুষ যে সকল খাবার খায়, তার অন্তত শতকরা ৯৫ ভাগ আসে মাটি হতে। তাই মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ন। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির সুসাস্থ্য বজায় রাখার বিকল্প নেই। তাই আমাদের উচিত মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সুষম মাত্রার জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যাতে মাটি কাংখিত উর্বরতা ধরে রাখা যায় এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। লবণাক্ততা, নদী ভাঙন ইত্যাদি কারণে প্রতিবছর এক দিকে কৃষি জমি যেমন কমে যাচ্ছে অপরদিকে ভেজাল সার ও অপরিকল্পিতভাবে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লবণাক্ত এলাকায় ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির জন্য খামার পুকুর প্রযুক্তি, মাল্চ ব্যবহার ও কলস সেচের মাধ্যমে বিভিন্ন মাদা ফসল এর আবাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাই আসুন আমর াআমাদের কৃষক ভাইদের সচেতন করি এবংভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুস্থ্য মৃত্তিকা সম্পদ উপহার দেওয়ায় সচেষ্ট হই ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক কার্যালয় সাতক্ষীরা’র উপরিচালক অলি আহমেদ ফকির, সাতক্ষীরা হটিক্যালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আমজাদ হোসেন, বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরা’র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাবুল আক্তার, জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ খালিদ সাইফুল্লাহ। বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস এর উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক জনাব কর্মকর্তা শামসুন নাহার রত্না। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বারি, ব্রি,বিনা, বিএডিসি, কৃষি বিপনন অধিদপ্তর, এসসিএ, এর কর্মকর্তাগন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কৃষি অফিসার, জেলা মৎস্য অফিসার, জেলা প্রানি সম্পদ অফিসার, জেলা তথ্য অফিসার প্রমূখ। এসময় কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক কার্যালয় সাতক্ষীরা’র উদ্ধর্তন কর্মকর্তা ও কৃষক/কৃষাণীরা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply