1. nokhatronews24@gmail.com : ajkarsatkhiradarpan darpan : ajkarsatkhiradarpan darpan
  2. install@wpdevelop.org : sk ferdous :
শীতকালীন পিঠা: বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য - আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ
রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৯ অপরাহ্ন
১৩ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ খবর :
📰প্রথম আলোর বিভ্রান্তিকর রিপোর্টের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি📰সদরের সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের ঘুসের টাকা গ্রহনকারী মহসিনের ক্ষমতার উৎসাহ কোথায়? (১ম পর্ব)📰স্বামী-সন্তানকে ফেলে পরকীয়ায় রেহেনা এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ📰পাইকগাছায় ইয়াবাসহ যুবক আটক📰পাইকগাছায় বিভিন্ন পূজামন্ডপে বিএনপির সিসি ক্যামেরার প্রদান📰শ্যামনগরের ৭০টি পূজা মন্দিরে বিএনপির উপহার হস্তান্তর📰সাগরে লঘুচাপ, তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত📰সাতক্ষীরায় “বিশ্ব গণমানুষের সেবা ফাউন্ডেশন”এর জেলা কমিটি অনুমোদন📰পিআরসহ ৫ দফা দাবিতে সাতক্ষীরা জামায়াতের বিক্ষোভ📰কালিগঞ্জে পুকুরে ডুবে দুই বছরের শিশুর মৃত্যু

শীতকালীন পিঠা: বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য

মোঃ তুহিন হোসেন সাতক্ষীরা থেকে:
  • হালনাগাদের সময় : বুধবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪
  • ৮১ সংবাদটি পড়া হয়েছে

মোঃ তুহিন হোসেন সাতক্ষীরা থেকে:
ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুতেও পরিবর্তন ঘটে। কার্তিক অগ্রহায়ণ মাস হালকা হিমেল বাতাস দিয়ে জানান দেয় শীতকাল আসতে চলছে। কৃষকের মাঠ গুলো সোনালি ধানের হাসিতে ভরে ওঠে। শুরু হয় বাঙালির নবান্নের উৎসব যা চলে পুরো শীতকাল ব্যাপি। হেমন্তঋতু ও শীত ঋতু বাঙ্গালির জীবনে অনেক বেশি প্রভার বিস্তার করে অন্য ঋতুর তুলনায়। চারদিকে চলা নতুন ধান দিয়ে নবান্ন উৎসবের আয়োজন এখন বাঙালির একটি সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে।
শীতকালে মানে বাঙালির উৎসব উৎসব ভাব। পৌষ ও মাঘ মাস বাংলাদেশে শীতকাল হলেও নতুন চালে পিঠা খাওয়ার ধুম শুরু হয় কার্তিক মাসে নতুন ধান কাটার পর থেকেই। কার্তিকের মরা মঙ্গাকে অতিক্রম করে কৃষকের গোলা নতুন ধানে ভরে ওঠে। নতুন চালের গুড়া দিয়ে পৌষ পার্বণে পিঠা খাওয়ার প্রচলন অনেক প্রাচীন। অগ্রহায়ণ মাসের গোলা ভরা ধান থেকে করা নতুন চাল দিয়ে গ্রামের মা চাচি দাদি নানিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন পিঠা বানানো নিয়ে যা আমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। প্রত্যেক দেশেরই লোকজ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থাকে। শীতের পিঠা বাংলার চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অংশ। শীত আর পিঠা একে অপরের পরিপূরক বলা যায়।শীতের সকালে রোদে বসে নতুন চালের ধোঁয়া ওড়ানো গরম গরম পিঠাপুলি খাওয়ার মজাই আলাদা। নতুন চাল, খেজুরের রসের নতুন গুড়ে টইটম্বুর পিঠা বাঙালির শীত উদ্যাপনকে রঙিন ও উৎসবমুখর করে তোলে।  মূলত মাঘ-ফাল্গুন এ দু’মাসই জমিয়ে পিঠা খাওয়া হয়। এরপর শীত চলে যাওয়ায় আর পিঠার স্বাদ ঠিকমতো পাওয়া যায় না। ফলে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম শীতকালেই বেশি পড়ে। বাংলা ভাষায় লেখা কৃত্তিবাসী রামায়ণ, অন্নদামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চৈতন্য চরিতামৃত ইত্যাদি কাব্য এবং মৈমনসিংহ গীতিকায় কাজল রেখা গল্পকথনের সূত্র ধরে আনুমানিক ৫০০ বছর আগেও বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতিতে পিঠার জনপ্রিয়তার উল্লেখ পাওয়া যায়। কাজেই ধরে নেওয়া যায় পিঠা খাওয়ার প্রচলন বাঙালি সমাজে বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক প্রাচীন। বিশাল উপমহাদেশে বসবাস করা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে পিঠা যে জনপ্রিয় খাবার, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রাচীন বাংলায় মিষ্টান্ন হিসেবেও পিঠার জনপ্রিয়তাই বেশি ছিল। তাই বাঙালির লোকজ ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। পিঠা-পায়েস সাধারণত শীতকালের রসনাজাতীয় খাবার হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত এবং মুখরোচক খাদ্য হিসেবে বাঙালি সমাজে আদরণীয়। আত্মীয়স্বজন ও পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে পিঠা-পুলির উৎসব বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
‘পিঠে’ শব্দটি সংস্কৃত ‘পিষ্ঠক’ থেকেই এসেছে। পিঠে-পুলি খাওয়ার চল গ্রামবাংলার অস্থিমজ্জায় মিশে আছে। এমনভাবে মিশেছে যে পিঠে নিজেই এক উৎসবের নাম। পিঠা আর বাঙালিকে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। বাঙালি কতটা অতিথি পরায়ন তা এই সময় বেশ ভালোভাবেই বলা যায়। অতিথি বিশেষ করে জামাইদের এ সময় দাওয়াত করে পিঠা খাওয়ানো হয়। এ সময় খেজুরের রস থেকে গুড়, পায়েস এবং নানারকম মিষ্টান্ন তৈরি হয়। খেজুরের রসের মোহনীয় গন্ধে তৈরি পিঠা-পায়েস আরও বেশি মধুময় হয়ে ওঠে। সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠা হচ্ছে ভাপা পিঠা। এছাড়াও আছে চিতই পিঠা, দুধচিতই, ছিটি পিঠা, দুধকুলি, ক্ষীরকুলি, তিলকুলি, পাটিসাপটা, ফুলঝুড়ি, ধুপি পিঠা, নকশি পিঠা, মালাই পিঠা, মালপোয়া, পাকন পিঠা, ঝাল পিঠা ইত্যাদি। বাংলাদেশে এমন শতাধিক ধরনের পিঠার প্রচলন রয়েছে। কালের গভীরে যার কিছু হারিয়ে গেলেও এখনো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। শীতকালে শুধু গ্রামবাংলায়ই নয়, শহর এলাকায়ও পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। একসময় এ দেশে যেমন শত শত নামের ধান ছিল, তেমনি সেসব ধানের পিঠারও অন্ত ছিল না। এক এক ধরনের গুণ বা বৈশিষ্ট সম্পন্ন চালে এক এক ধরনের পিঠা প্রস্তুতের অনিবার্য সম্পর্ক ছিলো। কত কী বিচিত্র নামের সেসব পিঠা! পিঠা তৈরি ছিল আবহমান বাংলার মেয়েদের ঐতিহ্য। পিঠা-পায়েসকে নিয়ে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এখনো অসংখ্য গান, কবিতা ও ছড়া প্রচলিত আছে। পিঠাকে ঘিরে ‘পল্লী মায়ের কোল’ কবিতায় বিখ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন, ‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশীতে বিষম খেয়ে/আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।’ এ পার্বণ আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় পৌষসংক্রান্তিতে। পৌষসংক্রান্তি আবহমান বাংলার এক চিরায়ত সংস্কৃতি। পিঠা উৎসবের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে। এর আরেক নাম মকরসংক্রান্তি। পৌষ মাসের শেষ দিনে এই সংক্রান্তি পালিত হয়। ফলে এই দুই দেশেই পৌষসংক্রান্তি বেশ উৎসবের সঙ্গে পালন করে। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ দিনেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাড়ির উঠানে দৃষ্টিনন্দন আলপনা আঁকে। আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা পুড়িয়ে (চিতই পিঠা বানানোর মাটির পাত্র) পিঠা তৈরি শুরু করে। অনেকেই আজও এই দিনের আগে পিঠা খান না। আর তাই এই সংক্রান্তি পিঠা উৎসবে পরিণত হয়েছে। মকরসংক্রান্তির দিন সূর্য নিজ কক্ষপথ থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে। তাই দিনটিকে মকর সংক্রান্তিও বলা হয়। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিনে এই উৎসব হয়ে থাকলেও সাধারণত দুই-তিন দিন ধরে তা চলে। এ সময়ে জামাইকে নিমন্ত্রণ অথবা জামাইয়ের বাড়িতে তৈরি পিঠা পৌঁছে দেওয়ার রেওয়াজ থাকে। অবশ্য এখন আর সেভাবে সর্বমহলে পিঠা উৎসব পালনে শীতের বিশেষ দিন-ক্ষণের বাধ্যবদকতা নেই। এই বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসবের আয়োজন করা হতো। তাছাড়া বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই বাজি ফুটানো, ফানুস ওড়ানো রঙিন কাগজের ফুল বানিয়ে আঙিনা সাজানো ইত্যাদি আনন্দময় অনুঘটকের ভেতর দিয়ে এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটত। পিঠা যে শুধু খাওয়া নয় বরং সবাই মিলে আনন্দ করার এক অনন্য উপলক্ষ সেটাও টের পাওয়া যেত এই উৎসব থেকে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে একসময় গ্রাম বাংলায় বেশ ঘটা করে এই দিন পালনের রেওয়াজ ছিল। তবে কালের বিবর্তনের সঙ্গে আনেকাংশে হারিয়ে গেছে সেসব রীতিনীতি। পিঠার নাম শুনলেই জিভে জল আসে না এমন বাঙালি পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে শীতে পিঠা বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদিও ইদানিং শহুরে সংস্কৃতিতে পিঠার অবস্থান খুব নগণ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শীত পরবর্তীকালে। বিভিন্ন স্টলে বার্গার, প্যাটিস, পিৎজাসহ ফাস্ট, হটডগ, বারবিকিউ, স্যা-ুইচ, কেক ও জ্যাংফুডের জোয়ারে হারিয়েই যেতে বসেছে পিঠা। তাদের দাপটে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা পিঠে-পুলির স্বাদ ভুলতে বসেছে। আবার বাজারে গিয়ে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বাঁসি আর ধুলা-ময়লা মিশ্রিত তেলে ভাজা চপ, বেবগুনি খাওয়ার দৃশ্যও এখন বেশ পরিচিত। পিঠার বিষয়টা কালে কালে যেন অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের কাছে। হাজার বছরের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী আমরা। খাদ্যরসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছে। পিঠা যার সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়। যেহেতু পিঠা আমাদের সংস্কৃতির একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই আমরা যেন যে কোন উপায়ে তার প্রচলনকে ধরে রাখায় প্রয়াসী হই। আশার কথা এই যে, ঐতিহ্য আর কৃষ্টির বিবেচনায় ধীরে ধীরে যেন আবার ফিরে আসছে পিঠার কদর। এর ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে শিল্পকলা একাডেমিসহ নানা সংস্থা পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। রাজধানীসহ দেশের নানা শহরে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উদযাপিত এসব পিঠা উৎসবে মানুষের সমাগম ও আগ্রহ বেড়েছে। বেড়েছে পিঠার ব্যবহার ও পিঠা খাওয়ার ধুম। পিঠা উৎসব বা পিঠা মেলায় পিঠা দেখতে, খেতে ও চিনতে মানুষের ঢল নামে। মুখরোচক খাবার হিসেবে পিঠার স্বাদ গ্রহণ ও জনসমক্ষে একে আরো পরিচিত করে তুলতে শহরের পাশাপাশি এখন গ্রামেও বিভিন্ন স্থানে শীতকে ঘিরে আয়োজন করা হয় পিঠা উৎসব। এটা শুধু একটি উৎসব নয়, নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতার মাঝে নির্মল আনন্দের খোরাকও। গ্রামীণ সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতির প্রধান জায়গা। সেই গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান পিঠাপুলি। এ পিঠাপুলি নিয়ে দেশব্যাপি প্রতি বছর অনুষ্ঠিত মহোৎসব আমাদেরকে সেই শেকড়ের সংস্কৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। নাগরিক জীবনে যখন সবকিছু যান্ত্রিকতার আবদ্ধে সীমিত হয়ে পড়ছে তখন মানবিক বোধ থেকে আমরা পিঠা উৎসব প্রচলিত থাকার তাগিদ অনুভব করি।
সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জীবন যাত্রার যান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা কারণে এখন আর গ্রামে-গঞ্জে ঘরে-ঘরে সেভাবে ঘটা বা আনুষ্ঠানিকতা করে পিঠা উৎসব হয় না। সেই উৎসব এখন শহরে অথবা গ্রামে নানা পৃষ্ঠপোষকতায় আনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্তত এই উৎসবের কারণে আমরা আমাদের গ্রামের সেই পিঠাপুলির ঘ্রাণ নিতে পারছি, স্বাদ নিতে পারছি। পারছি কৃষ্টি, ঐতিহ্য আর আনন্দের জানান দিতে। নানান রকমের বৈচিত্রময় স্বাদের এসব পিঠা ভোজনরসিকদের রসনায় জোগায় ব্যতিক্রমী শিহরন। প্রত্যেক দেশেরই একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন থাকে যা তাদের খাদ্য ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নিঃসন্দেহে পিঠা। আমাদের জন্য পিঠা শুধু একটি খাবারই নয়, স্মৃতির ভা-ারও বটে। কারণ শৈশবে শীতকাল মানেই যেন মায়ের হাতের বিভিন্ন পিঠার স্বাদ। নানান নকশার পিঠা আর সেই পিঠাগুলোর পেছনে ইতিহাসের গল্প শোনা। অথবা ধোঁয়া উঠা গরম চিতই পিঠার সঙ্গে মাংসের ঝোল দিয়ে মজাদার নাস্তা সারা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত দক্ষিণ এশিায়ায় এই দিবস বা ক্ষণকে ঘিরে উদযাপিত হয় উৎসব। নেপালে এই দিবস মাঘি নামে, থাইল্যান্ডে সংক্রান্ত, লাওসে পি মা লাও, মিয়ানমারে থিং ইয়ান এবং কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান্ত নামে উদযাপিত হয়। নতুন ধান, খেজুরের গুড় বা পাটালি, দুধ, নারকেল আর চালের গুড়ার সংমিশ্রণে যথানিয়মে তৈরি হতো ঐতিহ্যবাহী পিঠা। এখন শীতকালে শহরের মোড়ে মোড়ে দোকানে, সবখানেই ঠেলাগাড়ি বা ভ্যানে পিঠা বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। সঙ্গে থাকে চিংড়ি, সরিষা, শুঁটকি, ধনে পাতাসহ অসংখ্য স্বাদের ভর্তার সমাহার। আর যারা মিষ্টিপ্রেমী তাদের জন্য ধোঁয়া উঠা গরম গরম গুড়, দুধমালই ও নারকেলে মিশ্রিত পিঠা তো আছেই। সে সুবাদে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আমরা যখন পিঠা কিনে খাই বা বাসায় ফেরার পথে পরিবারের জন্য পিঠা নিয়ে যাই, তখন আমাদের মধ্যে এক রকমের আনন্দ কাজ করে। যদিও সঙ্গত কারণে লব্ধপিঠা সংখ্যায় পরিমিত। পিঠা এখন মূলত বিশেষ সময়ের আনন্দ ও উদযাপনের প্রতীক, যা শীতের সকাল এবং সন্ধ্যাকে উপভোগ্য করে তোলে। শীতকালে আমাদের দেশে বিয়ের মৌসুম চলে আর পিঠা এই বিয়ে অনুষ্ঠানের একটি অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে ওঠে। পিঠা বাঙালির কাছে তাই শুধু একটি খাবার নয়। এটি রন্ধন শিল্প, ঐতিহ্য এবং আনন্দসংমিশ্রিত অতিথীপরায়ন সংস্কৃতির নিদর্শন। সুতরাং পিঠা-পুলি আমাদের লোকজ সাহিত্য ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই প্রকাশ। আমাদের হাজারো সমস্যা সত্ত্বেও গ্রামবাংলায় এসব পিঠা-পার্বণের আনন্দ-উদ্দীপনা এখনো মুছে যায়নি।
উপসংহার: পিঠা তৈরি আবহমান বাংলার মা মেয়েদের ঐতিহ্য। একসময় আমাদের দেশে শত শত নামের ধান ছিল, তখন বিচিত্র রকমের পিঠার নামও ছিল। পিঠা-পুলিকে কেন্দ্র আমাদের অনেক গান কবিতাও রচিত হয়েছে। তাই পিঠা পুলি অনেকটা আমাদের লোকজ সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ বলা চলে। এতো বিচিত্র রকমের পিঠা হয়তো আর কোনো দেশে তৈরি হয় না। হাজারো বাধা ও সমস্যা সত্ত্বেও গ্রামবাংলায় মা বোন চাচি খালাদের পৌষ পার্বণে পিঠা বানানোর উদ্দীপনা এখনো মুছে যায়নি। শীতকালে নবান্নের সময় পিঠা-বানানোর এ আনন্দ ও ঐতিহ্য টিকে থাকুক যুগ যুগ ধরে বাংলার ঘরে ঘরে।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক- দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ ও সাধারণ সম্পাদক- জেলা সাংবাদিক এসোসিয়েশন কল্যাণ সংস্থা সাতক্ষীরা মোঃ তুহিন হোসেন (বি.এ অনার্স, এম.এ)।

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :

সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি:

এম এ কাশেম ( এম এ- ক্রিমিনোলজি).....01748159372

alternatetext

সম্পাদক ও প্রকাশক:

মো: তুহিন হোসেন (বি.এ অনার্স,এম.এ)...01729416527

alternatetext

বার্তা সম্পাদক: দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা

সিনিয়র নির্বাহী সম্পাদক :

মো: মিজানুর রহমান ... 01714904807

© All rights reserved © 2020-2025
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd