নিজস্ব প্রতিবেদক: ফণি, আম্পান, ইয়াস সহ ছোটবড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াস লেগেই থাকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনে। ফণি আর আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবনে আবারো আঘাত হানে প্রলয়ঙ্কর জলোচ্ছ¡াস ইয়াস। এ জলোচ্ছ¡াসে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বেশ কিছু উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ জীবন।
মাথার উপরে খোলা আকাশ, হাঁটুর নিচে লবণ পানি। ফসলি জমি আর মৎস্য ঘেরে জোয়ার-ভাটায় খেলছে। বর্তমান সরকার এর থেকে পরিত্রাণের জন্য যে সমস্ত এলাকার দুর্বল ভেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে জনবসতি এলাকার ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে ঐ সমস্ত এলাকার ভেড়িবাঁধ দ্রæত মেরামতের জন্য বরাদ্দ সহ পাউবো কর্মকর্তাদের জোর নির্দেশনা দিয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী, দূর্গাবাটি, বুড়িগোয়ালিনি সহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ ভেড়িবাঁধ ঘুরে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে একশ্রেণীর মানুষ ঘোলাপানিতে মাছ শিকারে বাঁধ নির্মাণকে পুঁজি করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদাবাজি সহ স্থানীয় বড় বড় মৎস্যঘের মালিকদের কাছ থেকে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করে থাকে। যে কারণে বাঁধ মেরামতে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন অনেকটাই জিম্মি হয়ে বাঁধ মেরামত চালিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলেও স্থানীয় কৈখালী এলাকার বাসিন্দা শ্যামাপ্রসাদ মন্ডল, রজনীকান্ত হালদার, বুড়িগোয়ালিনীর মনোজ হালদার, দূর্গাবাটির মৎস্যঘের পাহারাদার বৈদ্যনাথ পাহাড় এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত¡াবধানে এ চলতি বর্ষা মৌসুমে থৈ থৈ পানির মধ্যে ভেঙে যাওয়া বাঁধ পাইলিং সহ জিওব্যাগ ফেলে মাটি ভরাট করে যুগোপযোগী বাঁধ নির্মাণে যে অক্লান্ত পরিশ্রম অব্যাহত রেখেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত ৩ টি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি লাঘবে শ্যামনগর উপজেলার ১শ ৯০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫টি প্যাকেজে ১৭ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ঐ ১৭ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ডিজাইন অনুযায়ী প্রতিকূল পরিবেশে মাটি ভরাটের কাজ শেষ নেমেছে ৮০ ভাগ। মাটি ভরাট, জিওব্যাগ স্থাপন, পাইলিংসহ ডাম্পিং এর কাজ শেষ হয়েছে ৫৫ ভাগ। চলতি মাসেই কাজের মেয়াদ শেষের পথে। যে কারণে বাকী কাজ শেষ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সময় প্রার্থনা করা হয়েছে। যা অনুমোদন হলে আগামী শীত ও শুষ্ক মৌসুমে শতভাগ মেরামত করা সম্ভব।
বালি ভরাট সহ কিছু অনিয়মের কথা স্থানীয়না জানিছেন এমন প্রশ্নের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, অথৈ পানির মধ্যে জিওব্যাগে বালিভরাট সহ মাটি ভরাট করে বাঁধ নির্মাণ করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা কেবল কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই অনুধাবন করতে পারবে। একশ্রেণীর মানুষ টেকসই বাঁধ নির্মাণ হোক এটা চায় না। কেননা অনেকটাই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসের উপর নির্ভর করে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে পুঁজি করে ত্রাণ আত্মসাতের মহোৎসবে মেতে উঠে। সে কারণেই বাঁধ নির্মাণের ইতিবাচক দিকগুলো তারা সহ্য করতে পারছে না। ইতিবাচক বিষয়গুলো সকলের কাছে তুলে ধরে সরকারের মহতী উদ্যোগ ভেস্তে দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে।
তিনি আনন্দের সাথে জানান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে টেকসই ভেড়িবাঁধ নির্মাণে চলতি অর্থবছরে যে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তার মধ্যে সাতক্ষীরার উপকূলীয় মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে ৫নং পোল্ডারে ৩ হাজার ৬শ ৭৪ কোটি ৩ লাখ টাকা ও ১৫নং পোল্ডারে ৯শ ৯৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যা বাস্তবায়নের জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খানুভাবে জরিপ চলছে। জরিপ কাজ শেষ হলে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এক কথায় এ প্রকল্প শুরু হলে সাতক্ষীরার উপকূলীয় মানুষের জীবনে নতুন সূর্য উদয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর। এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম আবুজর গিফারী জানান, আমি নিজেই ভেড়িবাঁধ নির্মাণ পরিদর্শন করেছি। কাজ যেভাবে চলমান রয়েছে তা এক কথায় মানসম্মত।
Leave a Reply