আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ ডেস্ক: ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাবগুলো বর্তমানে প্রায় একই সাথে বিভিন্ন অঞ্চলে হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। যা বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহের জন্য উল্লেখযোগ্য বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। বর্তমানে সারা দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্রতাপ প্রবাহ। কৃষকের ধান পাট লিচুসহ নানা ধরনের ফসল। পাটকেলঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে এখন মাঠে রয়েছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল বোরো ধান। তীব্র রোদের তাপে কৃষকের কাক্সিক্ষত ফসল ঘরে তুলতে কাকডাকা ভোরে কৃষকেরা রোদের উত্তাপ ছড়ানোর আগেই ধান কেটে বাড়ি ফিরছেন। বিকালে সূর্যের প্রখর তাপ নেমে গেলে কাঁচি নিয়ে ছুটছে কৃষকরা মাঠে ধান কাটার জন্য। পাটকেলঘাটার চোমরখালি গ্রামের কৃষক আসাদুর ইসলাম বলেন, প্রখর রোদের তাপে হিট স্ট্রোকের ভয়ে কৃষককরা ভোর বেলা এবং রাতে ধান কাটছেন। তাতেও সুফল মিলছে না। রোদের তাপে ধানের শীষ শুকিয়ে শীষ থেকে ধান ঝরে পড়ছে। যে কারণে কৃষকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কাক্সিক্ষত ফসল কম উৎপাদন হতে পারে। যুগীপুকুর গ্রামে আমচাষী কামরুল ইসলাম দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ কে বলেন, রোদের তীব্রতায় গাছ থেকে আম ঝরে পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা আমচাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হব। সেই সাথে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। এখন আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। তেঁতুলিয়া ইউপির আড়ংপাড়া গ্রামের অমল দাশ জানান, অতিরিক্ত তাপদাহে আমার জমির ভুট্টাগাছ পুড়ে গাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। খলিষখালী ইউপির বাগমারা গ্রামের মোসলেম মোল্যা জানান, আমার এ বছর ৪বিঘা জমিতে করলা, ভেন্টি, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, খিরাইসহ অন্যান্য ফসল অতিরিক্ত গরমের ফলে গাছ শুকিয়ে পানির অভাবে মারা যাচ্ছে। তাতে করে প্রায় এক লক্ষ টাকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তীব্র গরমে কৃষকের ফসল রক্ষার জন্য তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ কে বলেন, চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আগামী আরও কিছুদিন তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এসময় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কেন্দ্র ইনস্টিটিটিউট কর্তৃক চাষিদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। মাটির বৈশিষ্ঠের উপর ভিত্তি করে ফলন্ত আম গাছে ৭-১০দিন অন্তর সেচ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য ফল যেমন, লিচু, জামরুল, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি ফলন্ত গাছেও ৭-১০দিন অন্তর সেচ প্রদান করা প্রয়োজন। পরিবর্তিত বেচিন পদ্ধতিতে গাছের ৪পাশে রিং করে সেচ প্রদান করা উত্তম। তবে প্লাবন পদ্ধতিতেও সেচ দেওয়া যাবে। তাপ প্রদাহ কমলেও ফল পরিপক্ক পর্যন্ত ১৫দিন অন্তর সেচ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এতে ফল ঝরে পড়া কমবে ও ফসল বৃদ্ধি পাবে। মাটিতে পর্যাপ্ত রস ধরে রাখার জন্য গাছের গোড়ায় মালচিং করে পানি দেওয়ার প্রয়োজন।
Leave a Reply