নিজস্ব প্রতিনিধি: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনটি নিজেদের অনুকূলে রাখতে তৎপর সকল দলের প্রার্থীরা। তালা ও কলারোয়া দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসন। এ আসনের আওতায় রয়েছে ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৭ হাজার ৮৯১জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৪ হাজার ৮১৮জন ও পুরুষ ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ১৩ হাজার ৭৩জন।
সাতক্ষীরা-১ আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন ১৪দলীয় জোটের প্রধান শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ১৪দলীয় জোট সমর্থিত ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী জয়লাভ করেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে পরাজিত করে আসনটি জয়লাভ করেন। এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে থাকা সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মুজিবর রহমান। তিনি বলেন, তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিলে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে বিশ্বাস করেন। সংসদ সদস্য থাকাকালে এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সাতক্ষীরা বাইপাস সড়ক নির্মাণ কপোতাক্ষ খননসহ তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এছাড়া তালা ও কলারোয়ায় রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন হয়েছে তার সময়ে। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি পুনরায় এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে পত্রদূতকে জানান।
এ আসনে সাবেক এমএলএ, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ স ম আলাউদ্দিনের কন্যা জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যশা করেন। তিনিও দীর্ঘদিন মাঠে কাজ করছেন। জনগণের বিপদে-আপদে সুখে-দুখে মিশে আছেন। পিতার মতো তিনিও জনকল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে তিনি প্রত্যেক এলাকায় গড়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ভিত্তি। তিনি মনে করেন, দলের জন্য যেভাবে নিবেদিত হয়ে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ তৃণমূলের সিদ্ধান্ত ও মন্তব্য মূল্যায়ন করলে এবারের মনোনয়ন তাকেই দেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ১৪দলের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। কিন্তু গত পাঁচ বছরের মূল্যায়নে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা আর শরিকদের ছাড় নয়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী করার দাবিতে সোচ্চার তারা। এ কারণে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও এক ডজনের বেশি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মতে, বর্তমান সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায়। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করলেও ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের স্বার্থে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরে দাঁড়ান, ১৪দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীকে জয়ী করার পথ সৃষ্টি করে দেন। এরপর থেকে এ আসনটি আর ফিরে পায়নি আওয়ামী লীগ।
তবে এবার সাতক্ষীরা-১ আসনে কোন শরিক দল নয় বরং আওয়ামী লীগের যে কোনো প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নেতা কর্মিরা জানান, সাতক্ষীরা-১ আসনে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর কোনো বিকল্প নেই বলেই অভিমত তাদের। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির এড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোটের একই প্রার্থী পুনরায় নৌকা নিয়ে জয়লাভ করেন। সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। বিএনপির সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে। এ কারণে এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কে হতে পারেন সে বিষয়টি নিয়ে এখনো দলের নেতা কর্মীরা নিশ্চিত নয়। তবে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে তার স্ত্রী শাহানারা পারভীন নির্বাচনে অংশ নিতে পারে প্রচার রয়েছে। এদিকে ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সৈয়দ দিদার বখত। এ আসন থেকে সৈয়দ দীদার বখত জাতীয় পার্টির প্রার্থী হবেন সেটা এক প্রকার নিশ্চিত বলা চলে।
কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনবার নির্বাচিত ফিরোজ আহমেদ স্বপন এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিতে অনেক আগেভাগে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই নেতা দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে আন্দোলন সংগ্রামে আছেন। তিনিও আশাবাদী। এই আসনে তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম এবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মাঠে রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নুরুল ইসলাম দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেন এবং দলীয় প্রতীক পাওয়ার পরও জোটের স্বার্থে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোয়ন পাওয়ার আশায় মাঠে কাজ করছেন বলে জানান।
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন-আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম। কেন্দ্রীয়ভাবে তিনি মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টায় রয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি নৌকার হাল ধরে মাঠে থাকতে চান। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সৈয়দ কামাল বখত সাকির পুত্র সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এ লক্ষে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড. মোহাম্মদ হোসেন। মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি দল মনোনয় দিলে অবশ্যই নেত্রীকে নৌকা উপহার দিব। সাতক্ষীরা-১ আসনে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। এ আসনে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সরদার মুজিব মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন মাঠে আছি দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।
তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তবে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন পাক এ ব্যাপারে দলীয় সভানেত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। এ আসনে জাসদের জেলা সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু এবার জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি এলাকায় কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। সাতক্ষীরা-১ তালা কলারোয়া আসনে জামায়াতের পক্ষ থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রকাশ্য না হলেও গোপনে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা।
Leave a Reply