তুহিন হোসেন: তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার মানুষের জনজীবন। অস্বাভাবিক এই গরমে ডায়রিয়া ও হিট স্ট্রোকসহ পেটের নানা ধরনের পীড়া দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর ৩টায় ও তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি দেখা গেছে। তীব্র এ গরমে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। মৃদু, মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ শেষে এবার অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে সাতক্ষীরা জেলায়। তাপদাহে আমের গুটি, ধানের শীষ ঝরে যাচ্ছে। সবজি ক্ষেতসহ সকল প্রকার চাষ ব্যাহত হওয়ার আশংকা। হাসপাতালে শিশু রোগের সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাতক্ষীরায় গত কয়েকদিন ধরেই তাপমাত্রার পারদ ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রিতে বিরাজ করছে। দুপুর ১টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৩৪ শতাংশ। দুপুর ৩টায়ও তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি রেকর্ড করা হয়েছে।
সাংবাদিক আব্দুল মোমিন দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে বলেন টানা তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড গরমের সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষেরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। তাপমাত্রাজনিত কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রখর রোদের ঘাম ঝরানো তাপমাত্রার কারণে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন চরম বিপাকে। বিশেষকরে তীব্র রোদের তাপের কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক, ঠেলা ও ভ্যানচালকরা কাজ করতে পারছেন না। ফলে তীব্র তাপদাহে অনেকে অলস সময়ও পার করতে দেখা গেছে। আবার অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচন্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন। এছাড়া এই তাপপ্রবাহে রোজাদারদের কষ্টও বেড়েছে। তীব্র গরমে বয়স্ক, শিশুরা পড়েছে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে। রোজার মাস হওয়ায় একটু স্বস্তি পেতে ঠান্ডা শরবত, পানি, আইসক্রিম খেয়ে তৃষ্ণা মেটাতে পারছে না সাধারণ মানুষ। তীব্র এ গরমে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে আসা শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেককে গাছ তলায় অবস্থান নিয়ে বিশ্রাম নিতে দেখে গেছে। শহরের গাছের ছায়ায় ভ্যান চালক বিশ্রাম নেওয়া সময় মোঃ হোসেন আলী বলেন, ‘রোদ তো না, যেন আগুনের হল্কা বের হচ্ছে। বাইরে দুই চার মিনিট থাকা যাচ্ছে না। খুব তেষ্টা পাচ্ছে। শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।’ তিন-চার দিন আরো তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীব-বৈচিত্র্যের ওপর। এমন প্রচন্ড গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে সাতক্ষীরাবাসীর। এতে করে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। একটু শীতলতার জন্য শিশু-কিশোর সবাই পুকুর-নদী-বিলে ছোটাছুটি করছে। অসহনীয় প্রচন্ড গরমে গ্রামাঞ্চল কিংবা শহরে শিশু, বয়স্কদের জ্বর-সর্দি- ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। তাপের কারণে নানা বয়সীদের দেখা দিয়েছে চর্ম রোগও।
সাতক্ষীরার কাটিয়া থেকে বাবু দোকানদার দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে বলেন, ‘সকালের দিকে খরিদ্দার একটু আসে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকজনের উপস্থিতি কমতে থাকে। তাপমাত্রা এতো বেশি যে দোকানে দুটো ফ্যান চালিয়েও শরীর জুড়নো যাচ্ছে না।’
সাতক্ষীরা পৌর এলাকার রসুলপুর গ্রামের ফারহানা সুলতানা দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে বলেন, প্রচন্ড গরম পড়েছে। বাচ্চা নিয়ে খুবই সমস্যায় আছি। ঘরের মধ্যে গরমে থাকা যায় না। জানি না কবে বৃষ্টির দেখা মিলবে।
ভ্যান চালক মরিরুল ইসলাম দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে বলেন, কয়েক দিন থেকে ধরে যে তাপ উঠছে ভ্যান নিয়ে পাকা রাস্তায় বের হওয়া যাচ্ছে না। চাকা পানচার হয়ে যায় গরমে। এই গরমের মধ্যে ভাড়াও কমে গেছে। জানি না এ রকম প্রখর রোদ আর কত দিন থাকবে।
সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে বলেন, ‘এই গরমে সব বয়সী মানুষের ডায়রিয়াসহ পেটের নানা ধরনের পীড়া দেখা দিতে পারে। বয়স্ক যারা তাদের হিট স্ট্রোক হতে পারে। এ সময় যতদূর সম্ভব রোদে না বের হওয়া ভালো। শ্রমজীবী মানুষকে তো আটকে রাখা যাবে না। তাদের জন্যে পরামর্শ, সকাল সাড়ে দশটা ও বিকেলের দিকে যেন তারা কাজ করেন।’ বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার বিশেষ করে ডাব, ইফতারে ভাজা পোড়া খাবার পরিহারের পরামর্শ দেন তিনি।
Leave a Reply