আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ ডেস্ক: মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে আসক্তি তৈরি হওয়া এবং লেখাপড়ার ওপর এর প্রভাব পড়া একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে মোবাইল প্রযুক্তি অনেক সুবিধা দিয়েছে, তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার বিশেষ করে অনলাইন গেম, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের কারণে অনেকেই এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন, যা তাদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দেয়। গ্রাম থেকে হারিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া। এখন আর সন্ধ্যার পর এক জনের পড়া শুনে আরেকজন পাল্লা দিয়ে বই পড়ে না। কোন মা-বাবা তার সন্তানকেও বলে না যে অমুক পড়তেছে তুই বসে আছিস। অথচ ৫-১০ বছর আগেও সন্ধ্যার পর চারপাশ থেকে বিভিন্ন স্বর ভঙ্গিতে বই পড়ার আওয়াজ শোনা যেত। পরীক্ষা কাছাকাছি থাকলে তো কথায় নেই। কোন সহপাঠী বন্ধু দিনে ও রাতে কতক্ষণ পড়ালেখা করে গোপনে খোঁজ নিয়ে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করা হত। সবচেয়ে খারাপ ছাত্রটিও রাত-দিন পড়তো। যে কোন বোর্ড পরীক্ষার আগে গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়ার চর্চাটাও আর নেই। এ চর্চাটার জন্যই একসময় অ্যালার্ম ঘড়ির আলাদা একটা কদর ছিল।
বোর্ড পরীক্ষার আগে শিওর সাকসেস, টপ ব্রিলিয়ান্ট সাজেশন্সেরও খুব কদর ছিল। আগের বছর পাশ করা ভাই বোনদের কাছে সাজেশনস নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলতো। মাত্র ৫-১০ বছরের ব্যবধানে এখন সবই প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। সময়ের বিবর্তনে এখন সন্ধ্যার পর দল বেঁধে নামধারী ছাত্ররা মোবাইলে ব্যস্ত থাকে। কোথাও কোন পড়ার শব্দ নেই। গ্রুপ চ্যাটিং, অনলাইন/অফলাইন গেমস,পাব্জি, ফ্রী ফায়ার, টিকটক, চুলের বিভিন্ন স্টাইল কার্টিং করে পাড়া-মহল্লায় ও বাজারে আড্ডাবাজি, গ্রুপিং করা, শিক্ষা গুরুর সাথে বেয়াদবী, শিক্ষকের নামে মিথ্যাচার করা, নিয়ম ভাঙা, বেয়াদবী এগুলোই এখন তাদের পছন্দের তালিকায়।
শহর কিংবা গ্রাম সর্বত্রই মোবাইল আসক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। এর কিছু নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে সমাজে পড়তে শুরু করেছে। আবাল বৃদ্ধ বনিতা কেউ বাদ যাচ্ছে না মোবাইল আসক্তি থেকে। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়াসহ শারীরিক ও মানসিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মোবাইলের স্ক্রীনে অতিরিক্ত সময় কাটালে দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হতে পারে, পাশাপাশি মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় অযথা মোবাইলে ব্যস্ত থাকার ফলে পড়াশোনায় সময় কমে যায়, যা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাবিত হতে পারে। মোবাইল ব্যবহারের ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না, যার ফলে পড়াশোনা ও একাডেমিক পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করে দিয়েছে ঠিক তেমনি এর অপব্যবহার স্বাভাবিক জীবনে ছন্দ পতন করে তুলছে। তাই আমাদের সবাইকে মোবাইল আসক্তি কমাতে সবাই কে সচেতন হওয়া জরুরি বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।
শিক্ষকরাও কী পিছিয়ে আছেন এই ‘মোবাইল ম্যানিয়াতে’। না, পরিমাণে রকমফের হলেও তারাও এতে কম যাচ্ছেন না। শ্রেণিকক্ষের এক ঘণ্টা পাঠদানকালীন কাজে কমপক্ষে ৪-৫ বার ফোন দিচ্ছেন বা রিসিভ করছেন। এতে সমস্যাটা হলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কনসেনট্রেশন ভেঙে যাচ্ছে। আর একটি বিষয়, শিক্ষার্থীরাও মোবাইল ফোনে উৎসাহিত হয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে, শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধটাও কমে যাচ্ছে। অফিসের প্রধান মেসেজ না দিয়ে সরাসরি কল দেয়ার কারণে পাঠদানরত শিক্ষকও বাধ্য হয়ে কল রিসিভ করছেন। উন্নত বিশ্বে ‘মেসেজ’ দিয়ে রাখা হয় ক্লাস শেষে তিনি রেসপন্স করবেন। আমাদের এখানে ব্যাপারটি উল্টো হয়ে গেছে। পরীক্ষার হলেও শিক্ষকরা মোবাইলে কথা বলছেন, স্যোসাল মিডিয়া ভিজিট করছেন। ফলে পরীক্ষার্থীরাও সে সুযোগ নিচ্ছেন। মা-বাবা অফিস হতে এসে হয় মোবইলে বা টেলিভিশনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে স্কুলগামী সন্তানরা আরো বেশি সুযোগ পেয়ে যান। এতে কখনো কখনো মোবাইল ব্যবহারে সন্তানরা উৎসাহিত বোধ করেন। এজন্য মা-বাবা শিক্ষকে সংযত হতে হবে যা সন্তানদের নিয়ন্ত্রণে ভালো ফল দেবে। নীতিনির্ধারক মহল এক্ষেত্রে শিক্ষার চাপটা বাড়িয়ে দেন তাহলে শিক্ষার্থীরা মোবইল ফোনের উপর সময় দিতে কম সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে নীতিনির্ধারক বা প্রশাসনকে শক্ত হাতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মাঝে ব্যস্ত রাখতে হবে। ফলে মোবাইল ব্যবহারের সময়টা সংকুচিত হবে। পরিবারের মা-বাবাকে সন্তানের সামনে কম মোবাইল ব্যবহার করা উচিৎ। আর ধর্মীয় অনুশাসন ছাড়া ‘মোবাইল ম্যানিয়া’ নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব।
Leave a Reply