নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাটিয়া মৌজায় ভুয়া মালিক সাজিয়ে জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই দলিল বুনিয়াদে অন্যান্য কাগজপত্র তৈরী করে জমির নামজারি করা হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর থানার লাবসা ইউনিয়নের কৈখালী গ্রামের আপ্তাব উদ্দীন ও তার ভাইয়ের ওয়ারেশদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সাংবাদিক মুনসুর রহমান। তিনি এক অফিস থেকে আর এক অফিসে দিনের পর দিন ছুটে যেয়েও এর কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।
সাংবাদিক মুনসুর রহমান দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে জানান, সদর উপজেলার মাছখোলা গ্রামের মৃত. অবেদ আলী সরদারের ছেলে মৃত. দবির উদ্দীন সরদার দিং কাটিয়া মৌজার এসএ ৮২৯ নং খতিয়ানের ২২৬৪, ২২৬৫, ২২৬৬ ও ২২৬৭ নং দাগের ১.২৬ একর জমির প্রকৃত মালিক। লাবসা ইউনিয়নের কৈখালী গ্রামের মৃত পরশ উদ্দীন সরদারের ছেলে আকের সরদার, জাকের আলী সরদার, মোঃ বাকেম আলির স্ত্রী সাজেত্তভান বিবি, মৃত. আছিরদ্দীন গাজীর স্ত্রী অমেত্তভান বিবি, মৃত ছৈয়েদ আলি সরদারের স্ত্রী তারাভান বিবি, মৃত জনাব সরদারের ছেলে আবুল কাশেম, বাসারাত সরদার ও মেয়ে রাশিদা খাতুনকে মৃত. জহির উদ্দীন সরদারের ওয়ারেশ সাজিয়ে মৃত. আফিল উদ্দীন সরদারের ছেলে আপ্তাব উদ্দীন ও তার ভাই আকবর আলী ১৯৮৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর কোবলা দলিল (নং- ৯৩০০) তৈরী করে নেয়। অথচ মৃত. দবির উদ্দীন সরদার সম্পর্কের দিক থেকে উল্লেখিত মৃত. জহির উদ্দীন সরদার প্রতিবেশীসুত্রে চাচাত ভাই। পরবর্তীতে ওই দলিল মুলে আপ্তাব উদ্দীন ও তার ভাই আকবর আলীর ওয়ারেশরা নামজারির জন্য আবেদন করলে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই ২০০৯ সালের ১১ মার্চ পৌর ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকতা ও পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমান ৬৩৭/১ খন্ড খতিয়ানে রেকর্ড করার সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন সদর ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনারের কাছে জমা দিলে তিনি উক্ত সুপারিশপ্রাপ্ত ভূয়া কাগজমূলে ২০০৯ সালের ১৬ মার্চ নামজারি রেকর্ডের অনুমোদন দেন। আর এভাবেই আপ্তাব উদ্দীন ও তার ভাই আকবর আলীর ওয়ারেশরা উক্ত ১.২৬ একর জমির মধ্যে ০.২১ একর এবং একই মৌজার ৮৮৫ খতিয়ানের ৫৬৮, ৫৬৯ ও ৫৭০ দাগের ০.২০ একর এর মধ্যে ০.০২ একরসহ ৭ বন্দে মোট ০.২৩ একর সম্পত্তির মালিক হয়ে যান।
বিভিন্ন কাগজপত্র উপস্থাপন করে মুনসুর রহমান আরো জানান, আপ্তাব উদ্দীন ও তার ভাই আকবর আলীর ওয়ারেশদের তঞ্চকতার আশ্রয় নিয়ে করা জালিয়াতির মাধ্যমে বানোয়াট এসএ খতিয়ান সৃষ্টিতে তৎকালীন পৌর ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা পূর্ণ সহযোগীতা করেন। তিনি বলেন, দলিল করে দেয়ার সময় জমিদাতাগনের বরাতে দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে জহির উদ্দীন সরদারের মৃত্যুতে তারা ওয়ারেশসূত্রে উক্ত জমির মালিক। কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরী করা এসএ ৮৮৫ ও ৮২৯ খতিয়ানের কাগজপত্রে জহির উদ্দিন সরদারের কোনো নাম ও জমির অংশ না থাকা এবং দলিলদাতাদের পিতামাতার নাম ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় বিষয়টি উক্ত জমির প্রকৃত মালিক মৃত. দবির উদ্দীন সরদার দিংএর নজরে আসে।
মুনসুর রহমান আরো জানান, জেলা রেকর্ড রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে কাটিয়া মৌজার এসএ ৮৮৫ ও ৮২৯ খতিয়ানের সার্টিফাইড উঠাতে তিনি আবেদন করেন। কিন্তু রেকর্ড রুম থেকে ‘এই অফিসের আরওআর জরাজীর্ণ থাকায় কপি সরবরাহ করা গেলনা’ উল্লেখ করে আবেদন প্রত্যাখান করা হয়। অথচ একই রেকর্ড রুমের কথিত জরাজীর্ণ আরওআর থেকে আপ্তাব উদ্দীন ও তার ভাই আকবর আলীর ওয়ারেশদের একই বিষয়ে কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়। মুনসুর রহমান তার ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, পৌর ভূমি অফিসের কাটিয়া মৌজার প্রথম রেজিস্ট্রার থেকে এসএ ৮৮৫ ও ৮২৯ খতিয়ানের কাগজপত্র তৈরী করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানকার মূল খতিয়ানের কাগজ দীর্ঘ ৩৮ বছর পূর্বে নষ্ট হলেও তার ছায়ালিপি কোথা থেকে আসলো এটা কারো বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে আপ্তাব উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দলিলমূলে ঐ জমি আমাদের। রেকর্ড দিয়ে কি হবে? আমার জমির কোনো রেকর্ড দরকার নেই। আপনারা যা পারেন তাই করেন। সাতক্ষীরা সদর সহকারী (ভূমি) কর্মকর্তার কাছে জানার জন্য অফিসে গেলে তিনি কাজের জন্য বাইরে থাকায় তার ব্যবহৃত সেলফোনে একাধিকবার কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মুনসুর রহমান উক্ত জালিয়াতির প্রতিকার চেয়ে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
Leave a Reply