ন্যাশনাল ডেস্ক: ধেয়ে আসছে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। রবিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন উপকূলের বাসিন্দারা। উপকূলবাসীদের নিরাপদ রাখতে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এরপরও ভাঙাচোরা অরিক্ষত বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে ডুবে ৯১ সালের বন্যার মতো জানমালের ক্ষতির ভয়ে উদ্ধেগ উৎকণ্ঠায় কাপঁছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ। বিশেষ করে আনোয়ারা, বাঁশখালী ও সন্দ্বীপ উপজেলার উপকূলীয় এলাকাবাসী। এ তিন উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে প্রায় ১১ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) শিবেন্দু খাস্তগীর বলেন, আমাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। উপকূলীয় এলাকায় আমাদের যে সব বেড়িবাঁধ আছে তা সাগর থেকে ৬-৭ মিটার উপরে। এর মধ্যে ৬ মিটার উচ্চতা বেড়িবাঁধ আছে বাঁশখালী ও কুতুবদিয়ায়, তা একটু ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড়ের জলোচ্ছ্বাসে পানির উচ্চতা যদি ৬ মিটার হয়, তাহলে ৭ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় সমস্যা হবে না। আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ বলেন, রায়পুর উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ার ভাটার কারণে এলাকায় পানি প্রবেশ করে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশনায় উপকূলীয়বাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা’র মোকাবিলায় আমাদের সবকিছু প্রস্তুত আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালের সিডর, ২০০৮ সালের নার্গিস ও ২০০৯ সালের আইলা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে হওয়া ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় এলাকায়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সালে বেড়িবাঁধের সংস্কার, পরবর্তী সিসি বøক দিয়ে ঢালাই ও মাটির বাঁধ মেরামত করার পেছনে খরচ করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা। তারপরও নানা ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ার ভাটার কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে এসব বেড়িবাঁধ। উপকূলীয় তিন উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সন্দ্বীপ উপজেলা। ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। দ্বীপ উপজেলার ৫৬ কিলোমিটারের বেড়িবাঁধের ১০ কিলোমিটার অংশে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ৪৫ কিলোমিটারে মাটির বাঁধ রয়েছে। যদিও এর মধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটারের মতো বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে রয়েছে। বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়ার ইউনিয়নের ছনুয়ার টেক এলাকায় প্রায় চার কিলোমিটার মাটির বাঁধ থাকলেও সরু ও ভাঙাচোরা। এখানকার বাসিন্দারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এ উপজেলার ৬ ইউনিয়নে ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৪২ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ্জামান খান বলেন, ৩৬ কিলোমিটার সাগর উপকূল ছাড়াও সাঙ্গু ও জলকদর খাল মিলে অভ্যন্তরীণ উপকূল রয়েছে ১০৬ কিলোমিটার। সাগর উপকূলের চার কিলোমিটার অংশ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ছনুয়ার বেশিরভাগ এলাকা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
এছাড়াও উপকূলীয় উপজেলা আনোয়ারার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে আছেন উপকূলীয় হাজার হাজার মানুষ। অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কিছু কিছু জায়গায় কাজ চললেও এখনো উপকূলের বিভিন্ন অংশ খোলা রয়েছে। উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নেও পানি প্রবেশ করবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূল সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। কর্ণফুলী নদী, বঙ্গোপসাগর ও শঙ্খ নদীবেষ্টিত এ অঞ্চলের বারশত, রায়পুর, বরুমচড়া, বারখাইন ও জুঁইদন্ডী ও হাইলধর ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষ ঝুঁকিতে থাকে সবসময়। এ উপজেলার উপকূলীয় এলাকা আছে প্রায় ৭৬ কিলোমিটার। তার মধ্যে প্রায় চার কিলোমিটার উপকূল ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। শনিবার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করতে দেখা গেছে।
Leave a Reply