আজকের সাতক্ষীরা দর্পন ডেস্ক: গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ১০৭টন চিংড়ি রপ্তানী বেড়েছে। এসময় ২৩হাজার ২৩৮টন চিংড়ি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যার বাজারমূল্য ২৯ কোটি ৬৩লাখ ডলার। এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৯হাজার ১৩১টন, যার বাজারমূল্য ২৪ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক অর্থবছরের ব্যবধানে রপ্তানি ৪ হাজার ১০৭টন ও রপ্তানি মূল্য বেড়েছে ৪কোটি ৮০লাখ ডলার। এক যুগের বেশি সময় ধরে চিংড়ি রপ্তানি ক্রমেই নিম্নমুখী হলেও সমাপ্ত অর্থবছরে রপ্তানীর এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০০৮সালের পর থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দাম কমে যাওয়া ও বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বাড়তে থাকায় দেশে উৎপাদিত বাগদা বা গলদা চিংড়ির চাহিদা কমতে শুরু করে। তবে সমাপ্ত অর্থবছরে রপ্তানিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও বৈশ্বিক নানা সংকটের কারণে এ খাতে এখনই খুব বেশি সম্ভাবনা দেখছেন না দেশের রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রায় ৫০হাজার টন চিংড়ি রপ্তানি হয়, যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫৭ কোটি ডলার। অন্যদিকে ১৩বছরের ব্যবধানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৩ হাজার ২৩৮টন চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২৯কোটি ৬৩লাখ ডলারে। অর্থাৎ ১৩ বছরের ব্যবধানে চিংড়ির রপ্তানি কমেছে প্রায় ২৬হাজার ৩৬২টন বা ৫২ দশমিক ৭৩শতাংশ এবং রপ্তানি মূল্য কমেছে ২০কোটি ৩৭ লাখ ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য ছিল চীন। দেশটিতে প্রায় ৫ কোটি ৬৭লাখ ডলারে ৪হাজার ৪৪৬ টন চিংড়ি রপ্তানি করা হয়। এছাড়া নেদারল্যান্ডসে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলারে ৩ হাজার ৭১৭ টন, ইংল্যান্ডে সাড়ে ৪ কোটি ডলারে ৩ হাজার ৫২৬ টন, বেলজিয়ামে ৪ কোটি ডলারে ৩ হাজার ১৪৭ টন চিংড়ি রপ্তানি করা হয়।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মৎস্য-জাতীয় পণ্য রপ্তানির সিংহভাগই বাগদা চিংড়ি। তবে দেশে ভেনামি জাতের চিংড়ি সেভাবে উৎপাদন না হওয়ায় রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়েছি আমরা।’
গত অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও তা আশাব্যঞ্জক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বাড়াতে আরো কাজ করতে হবে। নতুন বাজার খুঁজতে হবে। সরকারকেও এ খাতের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’
বিএফএফইএর সভাপতি জানান, বর্তমানে বিশ্ববাজারে বাগদার চেয়ে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বেশি। বাংলাদেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ জাতের চিংড়ির উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যদিও ২০১০ সালের আগে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি কারখানা কাঁচামালের অভাবে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
বর্তমানে দেশে চিংড়ি চাষের উপযোগী জমি রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ হেক্টরে চাষ হয় বাগদা, গলদা ও চাকা চিংড়ি। অন্যদিকে হিমায়িত মাছ রপ্তানি খাতের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৪০টি। এসব কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা চার লাখ টনের বেশি। যদিও বর্তমানে মাত্র ২০টির মতো প্রতিষ্ঠান সরাসরি রপ্তানি করছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এমইউ সি ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বলেন, ‘ইউরোপের বাজারে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বেশি। অথচ আমরা বাগদা নিয়েই পড়ে আছি। ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের বাজারে অংশীদারত্ব বাড়াতে হলে ভেনামি চিংড়ি রপ্তানির কোনো বিকল্প নেই।’ এজন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
Leave a Reply