আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ ডেস্ক : বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর। নব্বই দশকের আগেও প্রায় সব গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই ছিল কাচারি ঘর। এ কাচারি ঘর ছিল গ্রাম বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু কালের বিবর্তনে এ কাচারি ঘর সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই কাচারি ঘরের দেখা পাওয়া যায় না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি কালচারে ভরা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাছারি ঘর এখন অস্থিত্ব হারিয়ে বিলুপ্তির পথে। এক সময় কাচারি ঘর ছিল বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামের আভিজাত্যের প্রতীক। বাড়ির বাহিরের আঙ্গীনায় দরজার মাথায় অতিথি, মুসাফির, ছাত্র ও জায়গিরদের থাকার এই ঘরটিকে কাচারি ঘর নামে চিনতেন সবাই।
কাচারি ঘরটি বাড়ির দরজায় ঘাটলার কাছে স্থাপন করায় বাড়ির সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়ে যেত। কাচারি ঘরে অতিথি, পথচারী, মুসাফির, বাড়ির ছেলেরা রাত্রিযাপন করতেন। যে কারণে সেই সময় রাতের বেলায় বাড়িতে চুরি-ডাকাতি কম হতো বলে অনেকে মত দেন।
কাচারিতে বাড়ির স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করতেন পাশাপাশি সকাল বেলা এটি মোক্তব হিসেবে ব্যবহার হতো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাড়ির সৌন্দর্য কাচারি ঘর এখন আর চোখে পড়ে না। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাছারি ঘর এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
যখন দেশে জমিদারী প্রথা যখন চালু ছিলো তখনো গ্রামের প্রভাবশালী মোড়লদের বাড়ির দরজায় কাচারিতে বসে খাজনা আদায় করা হতো। শালিস বিচারসহ গ্রামের সকল সামাজিক কাজগুলি পরিচালিত হতো কাচারি ঘরে বসে। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইট-পাথরের গাঁথুনিতে একেবারেই বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর। এখনো চলতে পথে মাঝে মধ্যে দুই একটি বাড়িতে কাছারি ঘর দেখা গেলেও রয়েছে অযতেœ-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায়। নেই আর কাচারি ঘরের সেই চিরচেনা শিক্ষার্থীদের পড়ার আওয়াজ, গ্রামের রাস্তায় সন্ধ্যায় পথচারীদের কাছে প্রতিটি বাড়ির স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের পড়ার আওয়াজ খুব পরিচিত ছিল। রাতের বেলায় জারীগান, লুডু খেলা, অতিথিদের গল্প-আড্ডা, সকাল বেলায় মোক্তবে আরবি পড়ার মধুর সুর সবকিছু মিলিয়ে কাছারি ঘর ভিন্ন মাত্রা যোগ করতো।এছাড়া এসব কাছারি ঘরে শ্রমিকরা বিশ্রাম নিতো কিন্তু এখন আর দিনের বেলায় কাজের শ্রমিকদের ক্লান্তি দূর করতে বিশ্রাম নিতে দেখা যায় না কাচারি ঘরে। কোথাও কোথাও এক সময়ের বাড়ির সৌন্দর্য কাচারি ঘর অযতœ আর অবহেলার কারণে এখন গোয়াল ঘরে পরিনত হয়েছে।
এছাড়া সালিশ বৈঠক, গল্প-আড্ডা, পথচারী ও মুসাফিরদের বিশ্রামাগার হিসেবে কাচারি ঘরের ব্যাপক ব্যবহার প্রচলিত ছিল।
গ্রামের অনেক যায়গায় এখনও ঐতিহ্যবাহী পুরোনো কাচারি ঘর কালের সাক্ষী হয়ে আছে। প্রায় প্রতিটি রাতে কাছারি ঘরওয়ালা বাড়িতে আসত অনাত্মীয়- অচেনা কোনো মুসাফির।
ভেতর বাড়ি থেকে শোনা যেত কোনো অচেনা মুসাফিরদের কণ্ঠ বাড়িতে কেউ আছেন ? কাছে এলে বলত : থাকবার জায়গা হবে ? “অনেক রাত, বাড়িতে যাওয়া যাবে না” এই কারণেই বাঙালিরা হয়ে উঠেছিল- অতিথি পরায়ণ।
তাই বিলুপ্ত হচ্ছে শতবর্ষের ঐতিহ্য কাছারি ঘর নামে খ্যাত বাহির বাড়ির বাংলো ঘরটি। এখন সবাই শহর কেন্দ্রীক। নিজেদের পরিবার নিয়েই সবাই ব্যস্ত। বাবা দাদার ঐতিহ্য নিয়ে মোটেও মাথা ব্যাথা নেই। বাবা দাদার সম্পদ ঠিকই বিক্রি করে নিয়ে যায় নিজের আভিজাত্য আরও অভিজাত করার জন্য।
Leave a Reply