ন্যাশনাল ডেস্ক: গত দুই বছর বাংলাদেশ থেকে কোন হজযাত্রী মক্কা-মদিনায় যেতে পারেননি। বিগত বছরগুলোতে হজ শুরুর প্রায় আট মাস আগেই দু’দেশের মধ্যে হজ চুক্তি হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর হজের আর মাত্র সাড়ে চার মাস বাকি থাকলেও এখনো হজচুক্তি অনুষ্ঠিত হয়নি। তাছাড়া সৌদি আরবে করোনার প্রভাব কিছুটা কমলেও এখনো প্রতিদিন বহুসংখ্যক মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ কারণে সব দেশের হজযাত্রীদের নিয়ে বড় পরিসরে হজ পালন নিয়ে সৌদি সরকার এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। বিদেশীদের সাথে এখনো হজচুক্তি করেনি সৌদি সরকার। এ কারণে চলতি বছরও বাংলাদেশিদের পবিত্র হজে যাওয়া অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে।
২০১৯ সালে সর্বশেষ বিভিন্ন দেশের ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪০৬ জন মুসল্লি পবিত্র হজ পালন করেন। ওই বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৫২ জন মুসল্লি হজ করতে যান। ওই বছর ১০ আগস্ট হজ অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য প্রায় আট মাস আগে ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর দু’দেশের মধ্যে হজ চুক্তি হয়।
এর পরের বছর ২০২০ সালের হজ অনুষ্ঠিত ৩০ জুলাই। এ হজের জন্য চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর। যদিও করোনা মহামারির কারণে ওই বছর বাংলাদেশ থেকে কেউ হজে যেতে পারেননি। ২০২০ সালে মাত্র ১০ হাজার সৌদি নাগরিক পবিত্র হজ পালন করেন। গত বছর সৌদি অবস্থানরত ৬০ হাজার দেশি-বিদেশী নাগরিক পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পান। বাংলাদেশ থেকে গত বছরও কোন হজযাত্রী যেতে পারেননি। তখন কোন হজচুক্তিও হয়নি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৭ থেকে ১২ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।সে অনুযায়ী বাকি আছে আর মাত্র সাড়ে চার মাস। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে হজ পালনে যেতে সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে আরো অনেক প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে দু’দেশের মধ্যে হজচুক্তি অন্যতম। কিন্তু চলতি বছরের হজের জন্য এখনো চুক্তি হয়নি। সঙ্গত কারণে হজযাত্রীদের নিবন্ধন, প্যাকেজ ঘোষণা, বিমানের সিডিউল কোন কিছুই হয়নি। বরং হজ কার্যক্রম না থাকায় বর্তমানে বেশিরভাগ বেসরকারি হজ এজেন্সির অফিস বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করা স্বল্প সংখ্যক এজেন্সির অফিস চালু রয়েছে।
বর্তমানে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের পবিত্র ওমরাহ পালনের সুযোগ দিয়েছে সৌদি আরব। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ যাত্রীরা প্রতিনিয়তই মক্কা-মদিনায় যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওমরাহ করছেন মুসল্লিরা। তবে বড় পরিসরে হজ পালন নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে সৌদি সরকার। এ কারণে এখনো তারা হজের বিষয়ে কোন ঘোষণা দেয়নি।
তবে বাংলাদেশে গত নভেম্বরে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার হার কমে গেলে তখন ধর্ম মন্ত্রণালয় হজ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে তাদের হজের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়েছিলো। গত ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওই সভায় আগামী হজ সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম শেষ করতে বলেছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। সে সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী পবিত্র হজে বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ-সৌদি হজ চুক্তির পর বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। তবে এরপর আবারো বাংলাদেশসহ বিশ্বে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়। যা এখন কিছুটা কমলেও মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়া অব্যাহত রয়েছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাস্ট্রদূত ইসসা ইউসেফ ইসসা আল দুহাআলান সচিবালয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ ব্যাপারে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে এখনো প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এর আগে দৈনিক চার-পাঁচ লাখ করে আক্রান্ত হচ্ছিলেন। বর্তমানে কিছুটা কমলেও আবারো করোনার প্রভাব বৃদ্ধি পায় কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে তারা। এ কারণে সৌদি আরব এখনই হজ চুক্তি করার ব্যাপারে আগ্রহী নয়।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী এপ্রিল মাসের আগে চুক্তি হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। রমজান মাস আসলে তখন পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
Leave a Reply