নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা কৃষি বিপ্লব হয়েও দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে কৃষকের অতি পরিচিত শস্য গম। তুলনামূলক আয়ের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় গম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে প্রান্তিক কৃষকরা। জেলা কৃষি অফিস বলছে, গত বছর উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ হলেও সেটা এবার নেমে এসেছে ৮১০ হেক্টরে। গত বছরের তুলনায় এবার গম চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের স্থলে বর্জন হয়েছে। জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায় দিন দিন গম চাষ ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে। মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী থাকলেও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, এমনকি ফলন কম হওয়ার কারণে গম চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন কৃষকেরা। নানা কারণে গম চাষ হুমকির মুখে পড়েছে। বিগত দিনে সাতক্ষীরা জেলায় গম চাষে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও বর্তমান সময়ে গম চাষে কৃষকেরা অনাগ্রহী হয়ে গেছে। কৃষকেরা মনে করেন, গম চাষের চেয়ে অন্য ফসল চাষ করে তুলনাম‚লকভাবে অনেক লাভ হয়। সে জন্য গমের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষ করছেন। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সাতক্ষীরার তত্ত¡াবধানে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের বারি গম-৩০ বারি মৌসুম ২০২১-২০২২ থাকলেও নিজ উদ্যোগে অন্য সব ফসলের মতো গম চাষ খুব কম হচ্ছে। তালা উপজেলার গনেশপুর বøক কৃষাণি রানু বালা দাশ বলেন, ‘আমাকে তালা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে গমের বীজ ফ্রী দিয়েছে। আমি ৩৩ শতক জমিতে কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী গম চাষ করেছি। বর্তমানে আমার ফসলের অবস্থা খুব ভালো। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে ভালো ফলন পাব।’ কৃষক মন্তাজ আলী জানান, সরকারি সহযোগিতায় ১৫ শতক জমিতে গম চাষ করেছেন তিনি। জমিতে এসে ফসল দেখলে মনটা জুড়িয়ে যায়। আগামী বছর সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও বেশি জমিতে গমের চাষ করার কথাও জানান মন্তাজ আলী। একাধিক কৃষক বলেন, সরকারিভাবে আমরা সহযোগিতা পেলে ধান চাষের পাশাপাশি গম চাষ করতে পারব। ধান চাষের ওপর কৃষকদের আগ্রহ ও ফলন বৃদ্ধি করতে যেমন বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। একইভাবে কৃষকদের গম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করলে সব কৃষকেরা গম চাষের প্রতি আগ্রহী হবে। কৃষকেরা আরও বলেন, অন্য ফসলের উন্নতমানের জাত ও বীজের গুণাগুণ, গুণগত মান সম্পর্কে আমরা সহজে জানতে পারি, কিন্তু গমের জাত ও বীজের গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আমাদের (কৃষকের) মাঝে প্রশিক্ষণ প্রদান করে গমের চাষ পদ্ধতি ও উন্নত জাতের বীজ সম্পর্কে অবগত করলে ভালো হবে। সাতক্ষীরায় সাধারণ, কাঞ্চন, আতবর, অগ্রণী, প্রতিভা, সৌরভ জাতের গম চাষ করা হয়। জেলার আবহাওয়া অনুযায়ী গমের চাষ করে কৃষকেরা ভালো ফলন পেয়ে থাকেন। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘গম চাষের উপযোগী জমিতে উচ্চম‚ল্যের সবজি চাষ হওয়ায় গম চাষ কমে যাওয়ার একটি কারণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকটি উপজেলায় গম চাষ কমে গেছে, প্রদর্শনী প্লট করে কিছু কিছু চাষিদের সার ও গমের বীজ বিনাম‚ল্যে প্রদান করা হয়েছে, তাছাড়া এ বছরে গম চাষের ওপর কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি, সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা কৃষকদের মাঝে প্রদান করা হয়েছে।’
Leave a Reply