1. nokhatronews24@gmail.com : ajkarsatkhiradarpan darpan : ajkarsatkhiradarpan darpan
  2. install@wpdevelop.org : sk ferdous :
উপকূলের কৃষি জমি দিনে দিনে কমছে, সংরক্ষণে প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ - আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ
রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:১২ অপরাহ্ন
১৩ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ খবর :
📰সদরের সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের ঘুসের টাকা গ্রহনকারী মহসিনের ক্ষমতার উৎসাহ কোথায়? (১ম পর্ব)📰স্বামী-সন্তানকে ফেলে পরকীয়ায় রেহেনা এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ📰পাইকগাছায় ইয়াবাসহ যুবক আটক📰পাইকগাছায় বিভিন্ন পূজামন্ডপে বিএনপির সিসি ক্যামেরার প্রদান📰শ্যামনগরের ৭০টি পূজা মন্দিরে বিএনপির উপহার হস্তান্তর📰সাগরে লঘুচাপ, তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত📰সাতক্ষীরায় “বিশ্ব গণমানুষের সেবা ফাউন্ডেশন”এর জেলা কমিটি অনুমোদন📰পিআরসহ ৫ দফা দাবিতে সাতক্ষীরা জামায়াতের বিক্ষোভ📰কালিগঞ্জে পুকুরে ডুবে দুই বছরের শিশুর মৃত্যু📰বিএনপি সবসময় জনগণের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করে আসছে- সাবেক ছাত্রনেতা রফিক

উপকূলের কৃষি জমি দিনে দিনে কমছে, সংরক্ষণে প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩
  • ৮৪ সংবাদটি পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষিই বাংলাদেশের কৃষ্টির মূল ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। আর এ কারণে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির অসামান্য অবদান ও সাফল্য সর্বজনস্বীকৃত ও আজ বৈশি^ক পরিমন্ডলে সমাদৃত। কৃষি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে যে সকল খাত সচল রেখেছে তার মধ্যে কৃষি অন্যতম। কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রাথমিকভাবে খাদ্যের যোগান আসে কৃষি, প্রাণি সম্পদ ও মৎস্য সম্পদ এই তিনটি উৎস থেকে। এ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় কৃষি, প্রাণি সম্পদ ও মৎস্য সম্পদের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবন জীবিকার অন্যতম উৎস হল কৃষি। এছাড়া ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকেও বাংলাদেশের কৃষিখাত যথেষ্ট আর্শিবাদপুষ্ট এবং অপার সম্ভবনার আধার। আয়তনের দিক থেকে বিশে^র ৯৪তম হলেও বাংলাদেশ খাদ্য শস্য উৎপাদনে এখন দশম। এমন চমকপ্রদ ও ইতিবাচক খবর সামনে আনতে পারি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিস এর কৃষি কথা সূত্রে প্রকাশ, শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ বিশে^ ধান উৎপাদনে তৃতীয়, চাল উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ, কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, আম উৎপাদনে সপ্তম, ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশে^ প্রথম, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, ছাগল উৎপাদনে বিশে^ চতুর্থ ও ফসলের জাত উদ্ভাবনে শীর্ষে বাংলাদেশ। মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ১৩.৪৭%। বর্তমান বিশে^ গড় উৎপাদনশীলতা ৫.৩ টন এবং বাংলাদেশে প্রায় ৪.১৫টন। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রুপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ প্রণয়ন করেছেন। সরকারের গৃহিত পরিবেশ বান্ধব কৃষি উন্নয়নমূলক ধারাবাহিক কার্যক্রমের ফলে দেশ আজ দানাশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
দেশের সামগ্রিক কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকান্ডকে অধিকতর গতিশীল, যুগোপযোগী ও কার্যকর করার লক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্তরিক উদ্যোগের ফলে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল আইন ১৯৯৬ সালে এবং সর্বশেষ ২০১২ সালে সংশোধনের মাধ্যমে দেশে কৃষি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে আরো সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করা হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের যত অর্জন আছে তার মধ্যে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি উল্লেখ করার মত। এটি বিশে^র উন্নয়নশীল দেশের জন্য উদাহরণও বটে। কিন্ত এত এত সম্ভবনানিয়েও উপকূলের কৃষি এক নিদারণ সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। সংকট হল কৃষি জমির ক্রমহ্রাসমানতা।
এক সময় বলা হত ‘মাছে ভাতে বাঙালি’, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, ক্ষেত ভরা ফসল ইত্যাদি। গ্রাম বাংলার কৃষকের মুখে মুখে ফসল কাটার গান, নারীদের ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার গীত এগুলি শোনা যেত। মাঠে মাঠে সবুজ ফসলের সমারহ, ধান গাছের ঢেউ জাগানো দোলা, পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ, কৃষকের উঠানে রাশি রাশি ধান শোভা পেত। গ্রাম বাংলায় দিগন্তজোড়া ফসলি জমিতে রাশি রাশি ফসলের দেখা মিললেও বর্তমানে কৃষি জমি ক্রমে ক্রমে সংকুচিত হয়ে আসছে।
দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলের দিগন্ত জোড়া কৃষি জমি কমে যাওয়ার বিষয়ে নানা বিধ কারণ রয়েছে বলে বিভিন্ন পেশাজীবিবৃন্দ মতামত প্রকাশ করেছেন। প্রথম ও প্রধান কারণ হিসাবে জনসংখ্যাবৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার সব ধরনের চাহিদা মেটাতে কৃষি জমিকে অকৃষি খাতে ব্যবহার করার ফলে কৃষি জমি কমছে। উপকূলের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শ্যামনগর উপজেলার বারটি ইউনিয়নে বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ৩,৮৭,৬২৩ জন। ২০১১ সালের আদমশুমারীর তথ্য অনুযায়ী উপজেলায় লোকসংখ্যা ৩,১৮,২৫৪ জন। এই হিসাবে দেখা যায় সমগ্র বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জনসংখ্যার চাহিদা মিটাতে কৃষি জমি ব্যবহার করে নির্মাণ হচ্ছে ঘর বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি। খনন করা হচ্ছে জলাশয়সহ অন্যান্য কিছু এবং এভাবে কৃষি জমিকে অকৃষি খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বৃহত্তম উপজেলা শ্যামনগর। বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা এটি। এই উপজেলার আয়তন ১৯৬৮.২৪ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ কৃষি শুমারী ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী সাতক্ষীরা জেলায় দুই ধরনের মাটি পাওয়া যায়। এক লবনাক্ত গঙ্গার জোয়ারে প্লাবন সমভূমি যা ফ্যাকাশে বাদামী এবং পলি দোঁ-আশ কাদামাটি। দুই গঙ্গার জোয়ারে প্লাবন সমভূমি অ্যাসিড সালফেট মাটি যা ধূসর পলিময় দোঁ-আশ কাদামাটি। এখানকার আবহাওয়া অন্যান্য এলাকার মত মৃদু। কৃষি শুমারী ২০১৯ অনুযায়ী জেলায় খানার সংখ্যা ৫১৪৩৬৬টি এর মধ্যে কৃষি খানার সংখ্যা ২৬০৫২১ টি। এর মধ্যে শ্যামনগর উপজেলায় কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৭১০০০টি। জেলার অর্থনীতি প্রধানত কৃষি নির্ভর। সমগ্র জেলা সহ শ্যামনগর উপজেলায় হাইব্রিড জাতের ধান, স্থানীয় উচ্চ ফলনশীল ধান, শাকসবজি, ডাল, মসলাসহ অন্যান্য খাদ্য শস্য উৎপাদন হয়ে থাকে। খাদ্য শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদনে জেলায় ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। জেলার মধ্যে শ্যামনগর উপজেলায় লবন পানির চিংড়ী চাষ ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে। জেলার অর্থনীতি কর্মকান্ড কৃষি হলেও অকৃষিখাতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড রয়েছে। অর্থনৈতিক শুমারী ২০১৩ অনুযায়ী শহর এলাকায় স্থাপনার সংখ্যা ১১.০৪%। পল্লী এলাকায় স্থাপনার সংখ্যা ৮৮.৯৬ %। বর্তমানে শহর ও পল্লী এলাকায় স্থাপনার সংখ্যা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্থানীয়রা মত প্রকাশ করেছেন।
কৃষি শুমারী ২০০৮ এর তথ্য অনুযায়ী জেলায় মোট খানার সংখ্যা ৪,৩৬,১৭৮ টি এবং ২০১৯ সালে খানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫,১৪,৩৬৬টি। ২০০৮ এর তথ্য অনুযায়ী অকৃষি খানা ছিল ১,৮৪,১৪২টি যা ২০১৯ এ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৫৩,৮৪২টি। কৃষি খানার সংখ্যা ২০০৮ এ ২,৫২,০৩৬ এবং ২০১৯ এ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৬০,৫২১টি। উল্লেখ্য ২০০৮ এর তুলনায় ২০১৯এ অকৃষি ও কৃষি খানা যথাক্রমে ৩৭.৮৫% ও ৩.৩৭% বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। কৃষি শুমারী ২০০৮ এর তথ্য অনুযায়ী জেলায় আবাদী জমির আয়তনের পরিমান ছিল শতকরা ৬১.৯৫ এবং ২০১৯ সালে আবাদী জমির পরিমান হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৩৯.৫১ %।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী জেলার শ্যামনগর উপজেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমান ৩৯৪২০ হেক্টর। স্থায়ী পতিত জমি যা আবাদযোগ্য কিন্ত আবাদে যায় নাই এমন জমির পরিমান ২১৬৩৪ .০০ হেক্টর। বর্তমানে আবাদী জমি যা আবাদে আছে এমন জমির পরিমান ১৭৭৮৬ হেক্টর। অনাবাদী জমির পরিমান ২৭৮১৪ হেক্টর। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোদাচ্ছের বিল্যা বলেন ২০০৯ সালে উপজেলায় আবাদী জমির পরিমান ছিল ২২,৬৬২ হেক্টর। পুকুর,বিভিন্ন খালে জলাশয়ে জমির পরিমান ২৫০ হেক্টর। শ্যামনগর উপজেলায় গ্রামের বাড়ী ঘর নির্মানের জন্য ব্যব‎হ্নত জমির পরিমান ৩২১ হেক্টর এবং রাস্তা, অবকাঠামো ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মানে ব্যব‎হ্নত জমির পরিমান ৪৬৫ হেক্টর ২০১১ এর তথ্য মতে।
জেলায় মোট বাগদা ঘেরের সংখ্যা ৫৪৯৩৫টি যার আয়তন ৫৯০৫৪ হেক্টর। গলদা ঘের ১১৬৬২টি ,আয়তন ৯৩৭৮ হেক্টর, কাঁকড়া ঘের ৩৬৪টি এর আয়তন ৩১ হেক্টর। কুাচিয়া মাছ চাষের আয়তন ৯.৫হেক্টর। জেলার উপকূলের শ্যামনগর উপজেলায় চিংড়ী ঘেরের সংখ্যা ১৫,৩৯৪টি এবং এর আয়তন ১৭৪০৭.০ হেক্টর। মৎস্য চাষে ব্যবহারিত জমির পরিমান ১৮০৪৫.৭২হেক্টর। জেলার মোট কৃষি জমির এক বিরাট অংশ মৎস্য উৎপাদনে ব্যবহারিত হচ্ছে।
জেলার সাধারণ মানুষ অধিক লাভের আশায় কৃষি শস্য দানা ফসল উৎপাদনে ব্যবহারিত জমি লবন পানির চিংড়ী চাষ, অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্প কলকারখানা তৈরী এবং কৃষি জমি ব্যবহার করে তৈরী করছে কলকারখানার বজ্য নিস্কাসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সহ অন্যান্য স্থাপনা। একদিকে যেমন কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে অন্য দিকে জমি উর্বরতা হারাচ্ছে।
কৃষি জমির সংকটের কারণ হিসাবে শ্যামনগর উপজেলার ঈশ^রীপুর ইউনিয়নের বংশীপুর গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান বলেন বৃদ্ধি প্রাপ্ত জনসংখ্যার জন্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে ইটভাটা গড়ে উঠা ও ইট ভাটার জন্য মাটির প্রয়োজনে কৃষি জমির মাটি ব্যবহার করছে। অনেকে কৃষি জমিতে ছোট ছোট পুকুর খনন করে মাটি ব্যবহার করছে। তিনি আরও বলেন কৃষি জমির মাঝ খানে বসত বাড়ী তৈরী ও বসবাস করার ফলে মানুষ যাতায়াতের রাস্তা নির্মান করছেন,অপরিকল্পিত ভাবে বৃক্ষ রোপন করছেন। এর ফলে দিনে দিনে কৃষি জমি কমছে। কৃষি জমির সংকট সমাধানে তিনি বলেন কৃষি জমি চি‎িহ্নত করা দরকার এবং একই সাথে আবাসিক এলাকা চি‎িহ্নত করতে হবে। কৃষি জমিতে যত্রতত্র ঘরবাড়ী নির্মান বন্ধ করতে হবে।
দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ইউডিসিতে কর্মরত কবিরুল ইসলাম কৃষি জমির সংকট বিষয়ে বলেন, দিনে দিনে লবনাক্ততা বৃদ্ধি, সেচ ব্যবস্থার অভাব, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কৃষি ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে ফলে কৃষি দানা ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বড় বড় চিংড়ি ঘেরের মধ্যে ছোট ছোট কৃষকের কৃষি জমি থাকায় ফসল উৎপাদনের ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি বলেন গাবুরায় কৃষি জমির এক অংশ বিগত ১৫ থেকে ২০ বছরে বেড়িবাঁধ ভাঙনে/নদী ভাঙনে নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। সংকট সমাধান হিসাবে তিনি বলেন, খাল গুলি পুন:খনন করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা, লবণ সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন করা এবং স্থানীয়ভাবে গবেষণা করা জরুরী।
শ্যামনগর উপজেলায় কর্মরত বেসরকারী সংগঠন লির্ডাসের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল কৃষি জমি সংকটের বিষয়ে বলেন, জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়া ও জনসংখ্যার অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় নিয়ম না মেনে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী আবাসিক স্থাপনা তৈরী করছেন। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় লোকালয়ে লবন পানি প্রবেশের ফলে লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় কৃষির দানা জাতীয় ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ইটভাটায় কৃষি জমির টপ সয়েল ব্যবহার করার জন্য জমি উর্বরতা হারাচ্ছে ফলে ফসল কমছে। এছাড়া ইটভাটার মালিকরা ইট ভাটার মাটি নিতে কৃষককে পুকুর খননে উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি বলেন, মৎস্য চাষ বেড়েছে এর ফলে দিনে দিনে দিনে দিনে শিল্প প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন তৈরী হচ্ছে কৃষি জমি ব্যবহার করে। মোহন কুমার মন্ডল আরও বলেন উপকূলীয় এলাকায় ষাটের দশকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার ফলে কৃষি জমি কমেছে এর সাথে সাথে প্রাকৃতিক দূর্যোগ বেড়ে যাওয়ায় নদী সংযুক্ত ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙে কৃষি জমি অনেক ক্ষেত্রে নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। বিশেষ করে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, কাশিমাড়ী ইউনিয়নের কথা বলেন। কৃষি জমির সংকট সমাধানে তিনি কৃষি ফসল উৎপাদনে ফসলের বৈচিত্র্যতা আনায়ন ও লবণ সহনশীল জাত উদ্ভাবনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করার কথা বলেন। উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং ইটভাটা স্থাপনে সরকারের আইন মেনে চলার কথা বলেন।
শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রকৌশলী ও চিংড়ি চাষি শেখ আফজালুর রহমান উপকূলের কৃষি জমির সংকট বিষয়ে বলেন অপরিকল্পিত চাষ ব্যবস্থা, জোনিং সিস্টেম চালু না থাকা, ভূখন্ডের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি, অধিকাংশ দরিদ্র মানুষের বসবাস থাকায় কৃষি জমির সঠিক ব্যবহার করতে না পারা, সুষ্ঠ পরিকল্পনার অভাব, অদক্ষ জনশক্তি, অপরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, জেন্ডার অসমতা এবং কৃষি কাজে নারীদের প্রাধান্য না দেওয়া, জনসাধারণসহ কৃষকবৃন্দ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করা বাসস্থান স্থানান্তর হওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে কৃষিতে প্রভাব পড়া, প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়া, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় লবন পানি কৃষি জমিতে প্রবেশ সহ চুইয়ে পড়া, লবনাক্ততার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়া, মহাজনী প্রথা চালু থাকা, মামলা মোকদ্দমা এবং হয়রানীর প্রভাব, বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহের কারণে কৃষি জমি সংকট হচ্ছে বলে জানান। এছাড়া পারিবারিক দ্বন্দ্ব, ধর্মীয় কুসংস্কার, কর্মে বিমুখতা, নদী ভাঙ্গনে জমি চলে যাওয়া সহ অন্যান্য বিষয় কৃষি জমি সংকটের কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় তার মতে বিগত ষাটের দশকের সময়ে বাঁধ নির্মাণের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার হেক্টর জমি নদী গর্ভে চলে গেছে বিভিন্ন ইউনিয়নে। এবং তিনি আশঙ্কা করে বলেন আরও দুই হাজার হেক্টর জমি ঝুঁকিতে রয়েছে যা ভবিষ্যতে নদী ভাঙনের কারণে নদী গর্ভে চলে যেতে পারে। কৃষি জমির সংকট সমাধানে তিনি জোনিং সিস্টেম চালু করা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করা, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করা, নারীদের কৃষিতে সম্পৃক্ত করণ, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, জমির শ্রেণিকরণ করাসহ অন্যান্য বিষয়ে বলেন।
গাবুরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নন্দ লাল মন্ডল বলেন, গাবুরা ইউপিতে মোট জমির পরিমান ১২,১১৯.২৭ একর। ঘূর্ণিঝড় আইলা পরবর্তী ইউনিয়নে অনুমান ৪০ একর অর্থাৎ ১২০ বিঘা কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে বলে জানান। ইউনিয়নে আবাসন,রাস্তা-ঘাট ,বেড়ী বাঁধ অন্যান্য স্থাপনায় ব্যবহারিত জমির পরিমান অনুমান ৫০০ একর। তিনি বলেন, ইউনিয়নে চিংড়ি চাষের প্রভাব বেশি। শস্য জাতীয় ফসলের চাষ কম রয়েছে। কৃষি জমি সংকট সমাধানে তিনি টেকসই বেড়িবাঁধের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন। পদ্মপুকুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তপন মন্ডল বলেন, পদ্মপুকুরে আইলা পরবর্তী প্রায় ১৫২ বিঘা জমি নদী ভাঙনে চলে গেছে। কাশিমাড়ী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, আইলা পরবর্তী কাশিমাড়ী বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙনে প্রায় ৬ একর অর্থাৎ ১৮ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল গণি বলেন, এই ইউনিয়নে বাঁধ নির্মাণের পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি প্রায় ৪০০ একর অর্থাৎ ১২০০ বিঘা কৃষি বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙনে চলে গেছে। সকল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কৃষি জমি সংকটের কারণ হিসাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, আবাসন নির্মাণ, ইউনিয়ন পর্যায়ে শিল্প কলকারখানা নির্মান, অপরিকল্পিত চিংড়ী চাষ সহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা উল্লেখ করেছেন। সংকট সমাধানের সুপারিশ হিসাবে তারা কৃষি জমি সুরক্ষা আইন যথাযথ মেনে চলা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগেরও বিষয় উল্লেখ করেছেন। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের বিষয় বলেছেন।
উপকূলের কৃষি জমি সংকট বিষয়ে সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিপিকা রায় বলেন, প্রাচীন যুগ থেকে নারীর হাতে বোনা বীজ দিয়ে কৃষির শুরু। বীজ সংরক্ষণ, রোপন, সেচ, ফসল উৎপাদন, উত্তোলন, বিপণনে নারীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। আইএলও শ্রমশক্তির জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ১ কোটি ২৫ লক্ষ নারী শ্রমিকের মধ্যে ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ৯২ লক্ষ নারী কৃষি কাজ করেন। দেখা যায় কৃষিতে নারীর সংখ্যা বেড়েছে। কৃষিতে নারীর সংখ্যা বাড়লেও জমির মালিকানা পেয়েছে পুরুষ বেশি, নারীর মালিকানা খুব কম। বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬ এর ৩৪৫ ধারা অনুযায়ী নারী পুরুষের সমকাজে সমান মজুরী প্রদানের কথা থাকলেও হচ্ছেনা। পুরুষ প্রায় দৈনিক কাজ করে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পচ্ছেন, সেক্ষেত্রে নারী দৈনিক ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পাচ্ছেন। ফলে নারীরা কৃষি ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এছাড়া তিনি অপরিকল্পিত নগরায়ন, সুপেয় পানির সংকট, নারীর স্বাস্থ্য হানির কথা উল্লেখ করেন। উপকূলে সুপেয় পানির অভাবের কারণে নারীদের বহু দূর থেকে পানি আনতে যেয়ে সময় ব্যয় করতে প্রত্যহ এর ফলে কৃষিতে সময় কম দিতে পারে।
সিপিডির গবেষণা অনুযায়ী নারীরা পুরুষের তুলনায় ৩গুণ বেশি কাজ করেন। একজন গ্রামীণ নারী প্রতিদিন ঘর গোছানো, রান্না ঘর পরিস্কার, গোয়াল ঘর পরিস্কার, আঙিনা পরিস্কার,নদীতে পোনা সংগ্রহ সহ অন্যান্য কাজে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাটি করেন। তিনি নারী শ্রমিকদের পরিচয়পত্র প্রদান ও নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন এ গুলি সহ কৃষি জমি সুরক্ষা আইন যথাযথ মেনে চলা ও কৃষি জমি সুরক্ষায় গবেষণা করার কথা বলেন।
উপকূলের কৃষি জমি সংকট বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোদাচ্ছের বিল্যাহ বলেন, লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়া, মিষ্টি পানির অভাব বিশেষ করে শুকনা মৌসুমে ফসল উৎপাদনে পানির অভাব, কৃষকদের প্রশিক্ষণ স্বল্পতা, ফসলের ক্ষেতে সেচ ব্যবস্থার অভাব, অপরিকল্পিত চিংড়ী চাষ ও বেড়ী বাঁধ নির্মান, নদী-খাল পুন:খননের অভাব, কৃষি জমিতে স্থাপনা তৈরী, রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিভিন্ন ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ। তিনি বলেন শ্যামনগরে সুন্দরবন অংশ বাদে মোট জমির পরিমান ৪৫,৬০৯ হেক্টর।
কৃষি জমির সংকট সমাধানে তিনি অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ বন্ধ করা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা, সেচ উপযোগি মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করা, অধিকতর কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ফসলের লবন সহনশীল জাত উদ্ভাবন করা, টেক সই বেড়ী বাঁধ নির্মান, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদান, কৃষকদের পেনশন ব্যবস্থা চালু, কৃষকদের সহজ শর্তে উপকরণ প্রদান করার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন।
শ্যামনগর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শেখ সাজ্জাদুর রহমান ও মাসুদ রানা উপকূলের কৃষি জমির সংকট বিষয়ে মত প্রকাশ করে বলেন, কৃষি নীতিমালা না মেনে চলা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সরকারি নীতিমালা না মেনে চিংড়ি খামার গড়ে তোলা, নদী-খাল পুন:খননের অভাব, লবনাক্ততা ও খরার প্রবনতা বৃদ্ধি, মিষ্টি পানিতে ধান ও চিংিড় এক সাথে চাষ না করা ও মিষ্টি পানির অভাব,নদী ভাঙনে নদীতে জমি চলে যাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
উপজেলার নদী বেষ্টিত ইউনিয়নগুলি হলো-গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, কাশিমাড়ী, আটুলিয়া, কৈখালী, মুন্সিগঞ্জ ও রমজানগর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ মত প্রকাশ করে বলেন প্রবল ঘূর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আইলার ভয়াল থাবায় উপকূলের শ্যামনগরের নদী বেষ্টিত ইউপির বেড়িবাঁধ মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে ইউপির কোথাও কোথাও বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা অন্যান্য কারণে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়ী বাঁধ একই স্থানে বার বার ভেঙ্গে যাওয়ায় শক্ত ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে যেয়ে প্রথমে রিংবাঁধ দিতে হয় এবং পরবর্তীতে বড় বাঁধ নির্মাণ করতে হয়। এক্ষেত্রে একই স্থানে বার বার বাঁধ ভাঙ্গার কারণে নদী গর্ভে কৃষি জমি চলে যায়। জানা যায়, আইলা পরবর্তী উপজেলার গাবুরা গ্রামে একই স্থানে দুই বার, নাপিতখালী গ্রামে দুই বার, হরিসখালী এক বার, গাবুরা জেলেখালী দুই বার, লেবুবুনিয়া তিন বার, বুড়িগোয়ালিনী ইউপির পূর্ব দূর্গাবাটি গ্রামে দুই বার, পশ্চিম দূর্গাবাটি গ্রামে দুই বার, দাতিনাখালী গ্রামে তিন বার, পদ্মপুকুর ইউপির খুটিঘাটা গ্রামে তিন বার, চাউলখোলা গ্রামে তিন বার, চাকলা গ্রামে চার বার ও বন্যাতলা গ্রামে তিন বার বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গেছে। এ ছাড়া কাশিমাড়ী ইউপির ঘোলা, ঝাঁপালি গ্রামে দুই বার, গাগড়ামারী গ্রামে এক বার ও আটুলিয়া ইউপির বিড়ালক্ষèী গ্রামে এক বার একই স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং কৃষি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে।
অনুমান নির্ভর হিসাবে পাউবো কর্মকর্তাদ্বয় বলেন বেড়িবাঁধ নির্মানের পর থেকে শ্যামনগর উপজেলায় দুইশত বিঘার বেশি কৃষি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। তারা আরও জানান, চলে যাওয়া জমির পরিমান সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়নি এবং যে জমির মালিকের জমি নদী গর্ভে চলে যাবে তিনি নদীর অপর পারে বা এপারে চর জেগে উঠলে তিনি প্রাপ্য হবেন বলে উল্লেখ করেন। আনুমানিক ইউনিয়ন অনুযায়ী নদী গর্ভে চলে যাওয়া জমির পরিমান হল গাবুরা ইউপিতে ৭০ বিঘা, পদ্মপুকুর ৩০ বিঘা, কাশিমাড়ী ৫০ বিঘা, আটুলিয়ায় ১০ বিঘা, বুড়িগোয়ালিনী ৪০ বিঘা ও অন্যান্য ইউনিয়ন মিলে ১০ বিঘা।
কৃষি জমির সংকট সমাধানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা ও শেখ সাজ্জাদুর রহমান বলেন, উপজেলায় কৃষি, মৎস্য সম্পদ উৎপাদনে জোনিং সিস্টেম চালু করা, কৃষি নীতিমালা মেনে সব ধরনের আবাসন ব্যবস্থা তৈরী করা ও কৃষি নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ করা, রেগুলেটর গুলি (স্লুইস গেট) আধুনিকায়ন করা, নদী-খাল পুন:খনন করা, কৃষি জমি নষ্ট না করে খাস জমিতে মিষ্টি পানির জলাধার নির্মান করে ফসল উৎপাদনে উৎসাহ বৃদ্ধি করা, বেড়ী বাঁধ নির্মানে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা, বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ আইন প্রয়োগ করা ও রেগুলেটর এবং বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ কমিটি তৈরী করা, লবণ সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন ও উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করা, সরকারি নীতিমালা অনুসরণপূর্বক মৎস্য খামার পরিচালনা করা ও প্রকৃতিগত গড়ে উঠা নদীর চরসহ অন্যান্য স্থানে বনভূমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
কৃষি জমি সংকট বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলার সাবেক উপজেলা কৃষি অফিসার ও বর্তমান আশাশুনি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এস এম এনামুল ইসলাম বলেন অপরিকল্পিত নগরায়ন গড়ে তোলা, উপকূলের পরিবেশ বিপর্যস্ত হওয়া, লবণাক্ততার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়া, লবণ পানির অপরিকল্পিত চিংড়ী চাষে দানা শস্য ফসল উৎপাদনে ক্ষতি, নদী ভাঙনে কৃষি জমি চলে যাওয়া, সঠিক পরিকল্পনার অভাব, জোনিং সিস্টেম চালু না থাকা, ভূমির শ্রেণিকরণ না করাসহ অন্যান্য বিষয় উল্লেখ করেন। কৃষি প্রতিবেশভিত্তিক কৃষি জমির সংকট সমাধানে তিনি বলেন, ভূমির শ্রেণিকরণ করা, ফসলের বৈচিত্র্যতা আনয়ন করা, জোনিং সিস্টেম চালু করা, উপকূলের কৃষি জমি সুরক্ষায় সঠিক পরিকল্পনা প্রনয়ণ করা, ভূমি ব্যবহারে কঠোরভাবে নীতিমালা মেনে চলা বা নীতিমালা প্রনয়ণ করা, কৃষি জমি সুরক্ষায় জনসচেনতা সৃষ্টি করা, কৃষি জমি ব্যবহার আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা, স্থানীয় ফসল উৎপাদনের জাত নির্বাচন করা ও অধিকতর লবনসহনশীল ফসলের জাত নির্বাচন, উৎপাদন এবং আপগ্রেড করা। এছাড়া শুকনো মৌসুমে সেচ সমস্যা সমাধানে নদী-খাল পুন:খনন, মিনি পুকুর খনন ও নদীগুলি ড্রেজিং করা। তিনি বলেন, শুকনা মৌসুমে শুধু শ্যামনগর উপজেলায় সতের হাজার হেক্টর জমি সেচ ব্যবস্থার অভাবে পড়ে থাকে। এ কারণে তিনি পাশ^বর্তী বা সুবিধামত স্থান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে মিষ্টি পানি সরবরাহ করে ফসল উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারী-বেসরকারী প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে এবং এ জন্য কৃষি জমির পরিমান বেড়ে যেতে পারে।
উপকূলের কৃষি জমি ও কৃষি পরিবেশ সংকট ও সমাধান বিষয়ে শ্যামনগর উপজেল সহকারী কমিশনার ভূমি মো: আসাদুজ্জামান বলেন দেশে কৃষি বিপ্লব সাধনে কৃষকদের জন্য কাজ করে যেতে হবে। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না। জনগণের ঐক্যবদ্ধ কিন্তু নি:স্বার্থ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই দেশের বিধ্বস্থ অর্থনীতির দ্রুত পুন:গঠন এর নিশ্চয়তা বিধান করা যাবে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতি দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভাবেই কৃষিক্ষেত্র ও কৃষি জমির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকার অন্যতম উৎস হলো কৃষি জমি। এছাড়া ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকেও বাংলাদেশের কৃষিখাত যথেষ্ট আর্শিবাদপুষ্ট। তিনি খাদ্য শস্য উৎপাদনে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বলেন এত সম্ভবনা নিয়েও বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্র আজ এক নিদারুণ সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। সংকট হিসাবে কৃষি জমির ক্রম হ্রাসমানতা উল্লেখ করেন।
এর প্রথম ও প্রধান কারণ জনসংখ্যার উর্ধ্ব গতি বলে উল্লেখ করেন। দেশে প্রতি বছর কয়েক লাখ নতুন জনসংখ্যা যোগ হচ্ছে। এই অতিরিক্ষ জনসংখ্যার আবাসন চাহিদা মিটাতে কৃষি জমি নষ্ট করে ঘরবাড়ি তৈরী করা হচ্ছে এবং অন্যান্য অকৃষি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন গড়ে তোলা হচ্ছে, কৃষকরা কৃষি কাজ ছেড়ে শিল্প মুখি হচ্ছে। কৃষি জমিতে কলকারখানা গড়ে তুলছে এবং এর বর্জ্য কৃষি জমিতে পড়ায় জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। গ্রাম গঞ্জে নদী সংলগ্ন কৃষি জমি নষ্ট করে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। এর ফলে জমিসহ পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কৃষকরা জমিতে ইচ্ছামত রাসায়নিক সার,কীটনাশক ব্যবহার করছে এ জন্য কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে কৃষিকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। নদীর তীরবর্তী এলাকায় নদী ভাঙনে অনেক কৃষি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি বলেন, এত কিছুর পরও কৃষি জমি রক্ষা করে ফসল উৎপাদন করে আমাদের দেশে খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ফসল বিদেশে রপ্তানির সুযোগ ও সম্ভবনা দুইই রয়েছে। এজন্য কৃষি কাজে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখার কথা বলেন এবং কৃষকদের কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা, উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হলে কৃষি জমি রক্ষা হবে বলে জানান। কৃষক ছাড়া অন্যান্য পেশাজীবীদের কৃষি জমি সুরক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, নগরায়নরোধ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ বন্ধ, বাণিজ্যিকভাবে কৃষি জমির ব্যবহার বন্ধ, অল্প জমি কাজে লাগিয়ে বেশি ফসল উৎপাদন করা, উচ্চ ফলনশীল ও লবণ সহনশীল জাত আবিস্কার, প্রাকৃতিক দূর্যোগে টিকে থাকতে পারে এমন জাত উদ্ভাবনে মনোনিবেশ করার কথা বলেন।
উপকূলীয় এলাকায় খরা, লবণাক্ততা, জলমগ্নতাসহ অন্যান্য দূর্যোগ থাকায় কৃষি ঝুঁকিপূর্ণ। এ এলাকায় কৃষির উৎপাদন বাড়াতে কৃষি জমি চি‎িহ্নত করা, ছোট ছোট কৃষি জমি একত্রিতকরণ করা, এ অঞ্চলের উপযোগি ফসলচাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা, চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করার বিষয়ে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নদী মাতৃকদেশ। প্রায়ই বন্যা, জলাবদ্ধতা লেগে থাকে তাই দক্ষিণাঞ্চলে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজিচাষ সম্প্রসারণ করা যেতে পারে বলে জানান। সর্বোপরী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো: আসাদুজ্জামান বলেন সীমিত কৃষি জমিকে যত রকম উপায়ে কাজে লাগানো সম্ভব তার সব কয়টি উপায় চর্চায় এই সংকট নিরসন হতে পারে। এবং কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলেন।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আক্তার হোসেন উপকূল তথা শ্যামনগরের কৃষি প্রতিবেশ ও কৃষি জমি সংকট ও সমাধান বিষয়ে বলেন বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের প্রায় ৪১% মানুষ কৃষি কাজে সম্পৃক্ত। কৃষিকাজে নারী পুরুষ নির্বিশেষে কাজ করছেন। বর্তমান সরকার কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব্ দিয়ে আসছেন। বিশেষ করে উপকূলের কৃষি জমিতে দানা শস্য ও কৃষি জমি ব্যবহার করে লবন পানিতে মাছ চাষ হয়ে আসছে। সম্পদশালী জমির মালিকরা বড় আকারের আয়তন নিয়ে কৃষি জমি ব্যবহার করে লবণ পানিতে চিংড়ি চাষ, সাদা মাছ চাষ করার জন্য ছোট ছোট জমির মালিকদের কৃষি ফসল যেমন ধান, সবজি, ডাল, গম, সূর্যমুখী ইত্যাদি চাষের আগ্রহ থাকলেও সেটা সম্ভব হয়ে উঠছে না। বাধ্য হয়ে তাকে কৃষির দানা শস্য উৎপাদন বাদে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হতে হচ্ছে। এ জন্য বিভিন্ন প্রকার কৃষি জমি সম্পদশালী লোকজনের আওতায় চলে যাচ্ছে ফলে কৃষি কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন কৃষি শ্রমিকরা চিংড়ি চাষের প্রভাবে কৃষি কাজ করতে পারছেন না। দিনে দিনে লবণাক্ততার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে কৃষি ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। সকল ধরনের ফসলের লবণ সহিষ্ণু জাতের অভাব রয়েছে। শ্যামনগর উপজেলায় সেচ সংকট ব্যাপক আকারে রয়েছে বলে জানান। সেচ সংকটের ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি ফসল উৎপাদনে এক বড় বাঁধা হিসাবে তিনি অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের কথা বলেছেন। অপরিকল্পিত চিংড়ি, সাদা মাছ চাষের কারণে ছোট ছোট জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে জানান। ফলে কৃষিতে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কৃষি জমি কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে নদী ভাঙ্গনের কথা বলেছেন। উপকূলের শ্যামনগরে নদী বেষ্টিত ইউনিয়নে প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা অন্যান্য কারণে কৃষি জমি বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙ্গনে বিলিন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙনে জমি বিলিন হয়ে গেলে জমির সীমানা বা এলাকার সীমানা চি‎িহ্নত করণের নিয়মাবলী রয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক কোথাও চর জেগে উঠলে সেটি প্রাপ্য হবেন বলে জানা যায়। আরও জানা যায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ক্ষতিপূরণ দাবী করলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ারও নিয়ম রয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে কৃষি জমি কমছে বলে উল্লেখ করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আক্তার হোসেন কৃষি জমির সংকট সমাধানে জোনিং সিস্টেম চালু করা, কৃষি ও মৎস্য সহ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে চাষের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মিষ্টি পানি সংরক্ষণে খাল গুলি পুন:খনন করা, নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় নদী ড্রেজিং বিষয়ে বলেন। কৃষকের আঙিনায় সবজি চাষ করা, ছোট ছোট পুকুর খনন করার কথা বলেন। কৃষকদের প্রনোদনা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা করার কথা বলেন। তিনি বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় কৃষি, কৃষক, কৃষি জমি সুরক্ষায় সরকারের পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলেন।
শুধু অবকাঠামো নির্মাণ কাজের কারণে প্রতি বছর তিন হাজার হেক্টর জমি বিলিন হচ্ছে। দেশে চাষ যোগ্য জমি যে হারে কমছে তা রোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। বিশেষ করে রাস্তার পাশে কৃষি জমি গুলি নি:শেষ হচ্ছে। উচ্চাভিলাষী সুবিধাভোগীরা বাসা বাড়ি, দোকান ঘর নির্মাণ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। এক পর্যায়ে দেশে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। জনসংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে না জমি। সব চাপ পড়ছে কৃষি জমির উপর। ছোট ছোট জলাশয়গুলিও ভরাট করে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সুত্রে প্রকাশ, ১৯৮২-৮৩ সালে বাংলাদেশে প্রকৃত ফসলি জমির পরিমান ছিল ৯.১৫ মিলিয়ন হেক্টর। ২০১৭-১৮ সালে ফসলি জমির পরিমান কমে দাঁড়িয়েছে ৮.০২ মিলিয়ন হেক্টরে। দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৬৯০০০ হেক্টর আবাদী জমি অকৃষি খাতে ব্যবহারের জন্য চলে যাচ্ছে। ভূমি জরিপ বিভাগের তথ্য মতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে আবাদী জমির পরিমান ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর। যা বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ৮১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টরে। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০ এবং কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০ অনুসারে কৃষি জমি কৃষি কাজ ব্যতিত অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবেনা। এই আইনটি যথাযথ প্রয়োগ করা হলে কৃষি জমি রক্ষা হবে বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।
কৃষি জমি সংকটের প্রধান প্রধান কারণ সমূহ হলো-
১। দিনে দিনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ২। বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে কৃষি জমি ব্যবহার করে স্থাপন/নির্মাণ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার আবাসন ব্যবস্থা। আবাসিক এলাকা চি‎িহ্নত না করা। ৩। অপরিকল্পিত নগরায়ন গড়ে তোলা। ৪। খাল, নদী ভরাট হওয়া। ৫। লবনাক্ততার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া। ৬। লবন সহিষ্ণু বিভিন্ন প্রকার ফসলের জাত উদ্ভাবনের অভাব। ৭। কৃষি শ্রমিক স্থানান্তর হওয়া, নারীদের কৃষিতে কম সম্পৃক্ততা। ৮। উপকূলে অপরিকল্পিত লবণ পানির চিংড়ি, সাদা মাছ চাষ। ৯। জোনিং সিস্টেম চালু না থাকা। ১০। সেচ সংকট ও শুকনা মৌসুমে মিষ্টি পানির অভাব। ১১। অধিকাংশ জমি সম্পদশালীদের দখলে থাকা। ১২। কৃষি জমিতে ইটভাটা তৈরী ও ইটভাটার মাটির প্রয়োজনে কৃষি জমিতে মিনি পুকুর খনন করা। ইটভাটার প্রয়োজনে জমির টপ সয়েল ব্যবহার করা। ১৩। জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। ১৪। নদী ভাঙন, খরা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ বৃদ্ধি পাওয়া। নদী ভাঙ্গনে চলে যাওয়া জমির পরিমাণ চি‎ি‎হ্নত না করা। এবং ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণ না পাওয়া।১৫। নদী বেষ্টিত সকল ইউনিয়নে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকা। বেড়িবাঁধ সংরক্ষণে স্থানীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ কমিটি না থাকা। ১৬। কৃষি জমি সুরক্ষা নীতিমালা না মেনে চলা ও নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া। ১৭। কৃষি জমি সুরক্ষায় সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব। ১৮। জমির শ্রেণি করণ না করা এবং একই জমিতে বার বার একই ধরনের ফসল উৎপাদন করা। ১৯। বাল্য বিবাহ,বহু বিবাহ বৃদ্ধি, অদক্ষ জনশক্তি। ২০। কৃষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব। ২১। সমন্বিত চাষ ব্যবস্থাপনা চালু না করা। ফসল উৎপাদনে জৈব প্রযুক্তির পর্যাপ্ত ব্যবহার না করা।
কৃষিই প্রাণ। কৃষি জমি সংকটের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে সুপারিশ সমূহ-
১। জোনিং সিস্টেম চালু করা। ২। জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা। ৩। আবাসিক এলাকা চি‎িহ্নত করে পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
৪। নদী, খালসহ অন্যান্য জলাশয় দখল মুক্তসহ পুন:খনন করা। ৫। অতিরিক্ত লবণ সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন করা ও আপগ্রেড করা। ৬। কৃষি জমি সুরক্ষায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রনয়ণ করা ও কৃষি জমি সুরক্ষা আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা এবং সময় উপযোগি নতুন আইন প্রণয়ন করা। ৭। উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা। ও নদী ড্রেজিং ব্যবস্থা করা। ৮। সরকারি নীতিমালামেনে লবণ পানির চিংড়ি, সাদা মাছ চাষ করা। ৯। কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, প্রণোদনা ব্যবস্থা ও পেনশন স্কিম চালু করা। ১০। কৃষকদের সহজশর্তে ঋণ প্রদান ও উপকরণ সরবরাহ করা। ১১। ফসলের সেচ সংকট দূর করা। প্রয়োজনে পাইপ লাইনের মাধ্যমে মিষ্টি পানি সরবরাহ করা। ১২। সমন্বিত কৃষি চাষ ব্যবস্থাপনা চালু করা। ১৩। ইটভাটা স্থাপনে সরকারি নিয়ম মেনে চলা। ১৪। নারীদের কৃষিতে বেশি বেশি সম্পৃক্ত করণ করা। বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধ করা। ১৫। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকৃত কৃষকদের হয়রানী না করা। কৃষকদের কৃষি ফসলের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তিতে সরকারি বেসরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা। ১৬। প্রশাসনিক তদারকি বৃদ্ধি করা। ও কৃষি জমি সুরক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। ১৭। বাণিজ্যিকভাবে কৃষি জমির ব্যবহার বন্ধ করা। বিশেষ করে রাস্তা সংলগ্ন বা নিকটবর্তী কৃষি জমির যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করা। একই সাথে জমির খন্ডিকরণ বন্ধ করা। ১৮। কৃষি জমি ব্যবহার করে অপরিকল্পিত রাস্তঘাট নির্মাণ না করা ও অপরিকল্পিত নগরায়ন না করা। ১৯। জমির শ্রেণি করণ করা ও ফসলের বৈচিত্র্যতা আনায়ন করা। বাড়ীর আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সবজি বাগান করা। ২০। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিভিন্ন দূর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। ২১। নদী ভাঙন রোধ করা। এবং নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের/জমির মালিকদের ক্ষতি পূরণ দেওয়া। ২২। নারীর শ্রম মজুরী বৃদ্ধি করা, নারী শ্রমিকদের পরিচয়পত্র প্রদান ও নিবন্ধনের আওতায় আনা।
অভিজ্ঞদের মতে উপকূলের কৃষি জমি রক্ষা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সবার আগে ভূমির ব্যবহার পরিকল্পনা ও নীতিমালা জরুরী। লেখক-সিনিয়র শিক্ষক,সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :

সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি:

এম এ কাশেম ( এম এ- ক্রিমিনোলজি).....01748159372

alternatetext

সম্পাদক ও প্রকাশক:

মো: তুহিন হোসেন (বি.এ অনার্স,এম.এ)...01729416527

alternatetext

বার্তা সম্পাদক: দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা

সিনিয়র নির্বাহী সম্পাদক :

মো: মিজানুর রহমান ... 01714904807

© All rights reserved © 2020-2025
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd