মোঃ খায়রুল ইসলাম আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি:
কখনও আকস্মিক নদী ভাঙন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, কখনও মৌসুমি বন্যা। ২০২০ সালের ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও ইয়াসে কপোতক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে ভিটেছাড়া হয়েছিল শ’ শ’ পরিবার। টানা আড়াই বছর জোয়ার ভাটায় নদীর লবণ পানি উঠা নামা করায় গাছ গাছালি মরে প্রতাপনগরসহ অনেক ইউনিয়ন পরিনত হয়েছিল মরুভূমিতে। দূর্বিষহ জীবন কাটিয়ে দূর্ভাগাদের আস্তে আস্তে যেনো ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু হয়েছে। নদীমাতৃক এই অঞ্চলে ভাগ্য বদলের যুদ্ধে নেমেছেন বানভাসিরা। তাদের প্রচেষ্টায় আবারও সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলায় ভরে উঠেছে। সূর্যমুখী, আলু, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুটি, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, ধনিয়া, কালিজিরা, সরিষা, কলা, মিষ্টিআলু, তিল, মেথি, মসুর ডালসহ বিভিন্ন রকম ফসল চাষ হয়েছে। এখন যেখানেই চোখ রাখি সেখানেই শ্যামল-সবুজ বাংলা দেখতে পাই। ক্ষেত ভরা ধানের হাসি দেখে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখেও। হারিয়ে যাওয়া গ্রাম-বাংলা আবারো ফিরে এসেছে।
কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের আতাউর রহমান দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকেবলেন, আমরা তো সব সময় ক্ষতির মুখে থাকি। আগে আমরা ঘেরে মাছ চাষ করতাম। নদী ভেঙে জোয়ার ভাটায় পলি জমে ঘেরের তলা উঁচু হয়ে যাওয়ায় আর মাছ চাষ করতে পারছি না। তবে এবছর আলু চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছি। ২০ কেজি আলু পুঁতে ২৬ মণের বেশি আলু তুলে ঘরে এনেছি। এই মাটিতে যে এত প্রকার আবাদ হচ্ছে তা আমাদের কপাল। ভাগ্যগুণে এসব সোনার ফসল হচ্ছে। আমাদের কাছে ফসল নয়, সোনা। প্রতাপনগর গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, এবছর বর্ষা মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে সুগন্ধি দান লাগিয়ে প্রায় ৬০ বস্তা ধান পেয়েছি। বর্ষা মৌসুমের থেকে ব্লকের ধানের অবস্থা অনেক ভালো।
আশাশুনি উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দ্যুতি কৃষ্ণ সরকার দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে জানান, প্রতাপনগরের বিগত কয়েক বছরের তুলনায় কৃষকরা এই বছর সব থেকে বেশি ফসল আবাদ করেছে। নদী ভাঙার ফলে নিয়মিত জোয়ার ভাটায় মাটিতে পলি জমে। এ কারণে সেখানে জৈব সারের পরিমাণ বেড়ে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে সব ধরনের আবাদই হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রতাপনগর ইউনিয়নে ৭শ’ কৃষককে রাজস্ব খাতে কৃষি বীজ ও সারের প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। বিগত বছরগুলো থেকে এবছর তারা বিনা চাষে সরিষা চাষ করে এক ফসলের জমিতে ২ ফসলি ও ২ ফসলের জমিকে ৩ ফসলি জমিতে রূপান্তর করেছে। প্রতাপনগরের ৩ ব্লকে ২০২৩-২৪ মৌসুমে রবি ফসল হয়েছে ৬৫ হেক্টর ও ২০২৪ মৌসুমে বোরো আবাদ ১৪৮০ হেক্টর।
প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সবার কাছে আহবান করেন যাতে আমরা আবাদ যোগ্য একটুকরো জমি ফাঁকা না রাখি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ফলের চারা ও শস্য বিজ বিতরণ করেছি। আমার প্রতাপনগর ইউনিয়ন টি আবার ফলে ফসলে মুখরিত হয়ে উঠেছে। নদী থেকে লবণ পানি উঠানোর জন্য এই এলাকায় প্রতি বছর নদী ভাঙন হয়। আমি জেলা প্রশাসক সহ উদ্বর্তন কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ জানাই লবণ ঘের বন্ধ করে প্রতাপনগরের সবুজের সমারহ গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেন।
Leave a Reply