আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ ডেস্ক: সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে চাহিদা মোতাবেক ঘুষের টাকা ছাড়া কোন দলিল হয়না। একজন সেবা গ্রহিতা অফিসে ঢুকেই প্রথমে নিংড়ানির শিকার হন দলিল লেখকদের দ্বারা। পরে আরেকবার পোস্টমোর্টেম করেন খোদ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিরা। এ যেন হরিলুটের বাতাসা। দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে সদর সাবরেজিষ্ট্রি অফিস। যে যেভাবে পারছে ছিনিয়ে নিচ্ছে এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে সাবরেজিষ্ট্রারসহ কতিপয় কর্মচারিদের বিরুদ্ধে। আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের। রেট বেড়েছে ঘুষের। সদ্য যোগদান করা সাব-রেজিস্ট্রার অমায়িক বাবু নিজেকে আইন সচিবের লোক পরিচয় দিয়ে বাড়িয়েছেন ঘুষের রেট। টাকা ছাড়া যেন কোন কাজই হয় না এই অফিসে। ঘুষের টাকা দিতে দিতে ওষ্ঠাগত সাতক্ষীরাবাসির জীবন।
সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর যাবত সাতক্ষীরা সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস নিয়ন্ত্রণ করে আসছে অফিস সহকারি মহসিন। তার নেত্রীত্বে রয়েছে কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য তার মধ্যে অন্যতম টিসি সহকারী হাবিব ও অফিস সহায়ক বাচ্চু। এর মধ্যে মহসিনের বিরুদ্ধে আছে হাজারো অভিযোগ। দলিল লেখকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন হরহামেশা। চুক্তি ছাড়া হয়না দলিল। সাবরেজিষ্ট্রারও বলে দেন মহসিনের কথা। মহসিনের অত্যাচারে অতিষ্ট দলিল লেখক ও সাধারণ মানুষ। জানা গেছে, জেলা রেজিষ্ট্রারের আস্থাভাজন হওয়ায় দীর্ঘ দিন একই কর্মস্থলে আছেন। হাবিব ও বাচ্চু জেলার সকল অফিস থেকে জেলা অফিসের জন্য কালেকশন করে থাকে। সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য অফিস সহায়ক মহসিনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হওয়ায় সে নিজেকে গত কয়েক বছর সাবেক আইন মন্ত্রীর লোক পরিচয়ে বেশ দাপটের সাথে চলতো। তার নিয়ম অনুযায়ি বদলির সময় গত কয়েক বছর আগে বদলি হওয়ার কথা থাকলেও উৎকোচ আদায়ে দক্ষতা থাকায় জেলা রেজিস্ট্রারের সুদৃষ্টি তার দিকে। যে কারণে তার বদলি হয়না। জানা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহায়ক মহসিন ও জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের হাবিবুর রহমান হাবিব জেলা রেজিস্ট্রারের লোক হিসেবে পরিচিত। জেলা রেজিস্ট্রারের আর্থিকসহ সকল বিষয়ে তারা দু’জন দেখে থাকেন। গড়ে তুলেছে শক্তিশালি সিন্ডিকেট। জেলা রেজিস্ট্রার বাবদ সদর অফিসের টাকা তোলেন মহাসিন ও জেলাব্যাপি অন্য অফিসগুলোর জেলা রেজিস্ট্রারের নামের টাকা ওঠান টিসি সহকারি হাবিব ও বাচ্চু।
বর্তমান সদর সাব-রেজিস্ট্রার মহসিনের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উত্তোলন করান। তিনি সরকারি রাজস্ব ফাঁকি ও জনভোগান্তির রাজ্য তৈরি করছেন। সূত্র জানায়, একটি সাফ-কবলা দলিল লাখে এক হাজার টাকা, পরবর্তী ১০ লাখ পর্যন্ত প্রতি লাখে ৪শ’ টাকা, দশ লাখের ঊর্ধ্বে হলে প্রতি লাখে ৩০০টাকা এবং দলিল মূল্য এক কোটির ঊর্ধ্বে হলে আলোচনার মাধ্যমে রেট ঠিক করা হয়। দানপত্র, হেবাবিল এওয়াজ, এওয়াজ বদল, বন্টননামা, না-দাবি দলিলসহ সকল প্রকার দলিল রেজিস্ট্রিতে তার রেট অনুযায়ী অর্থ দিতে না পারলে দলিল রেজিস্ট্রি হয় না। এ সকল দলিলের ক্ষেত্রে তিনি ১০হাজার টাকা থেকে ত্রিশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন। এক ব্যক্তির দুই নাম হলে প্রত্যয়ন আনার পরেও চুক্তিতে টাকা নেওয়া হয়। তবে দলিলে দাতা বা গ্রহীতা অথবা জমির কোন সমস্যা থাকলে ৫০হাজার থেকে ৫লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন।
সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের ঘুষের টাকা গ্রহণকারী মহসিন দলিলের পর্চার ফটোকপি হলে মূল্য অনুযায়ী ১৫/২০ হাজার টাকা, পাওয়ার থেকে জমি হস্তান্তর হলে ১০হাজার থেকে লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে থাকেন। আর দলিল প্রতি টাকা তো আছেই।
কোন জমি প্লট আকারে ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শতকরা ৫% রাজস্ব প্রদানের বিধান রয়েছে কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি দলিল লেখকের মাধ্যমে দাতা গ্রহীতাকে প্লট ঘোষণা দিতে নিষেধ করেন। ফলে দাতা, গ্রহীতা ও সাব-রেজিষ্ট্রার সকলেই লাভবান হলেও সরকারের ব্যাপক রাজস্বে ক্ষতি হয়। তার কার্যকলাপে সাতক্ষীরা সদর রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ এখন অতিষ্ঠ। তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে দাবী সাতক্ষীরাবাসী।
খুলনা বটিয়াঘাটা সাবরেজিষ্টার অমায়িক বাবু গত ১৭-০৪-২৫ তারিখে যোগ দানের শুরুতেই তিনি শুরুতেই জড়িয়ে পড়েছেন বিভিন্ন অনিয়মের সাথে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর সাবরেজিষ্ট্রার অমায়িক বাবু তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমি নতুন এসেছি। কোন অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেব।
এব্যাপারে জেলা রেজিষ্ট্রার হাফিজা খাতুন রুমা জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবো। দুর্নীতির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য সাতক্ষীরাবাসী প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও দুদকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ( ৩য় পর্ব দেখার জন্য দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ পেজে FOllow দিয়ে রাখুন )
Leave a Reply