আব্দুল আহাদ, কলারোয়া
“শবে কদর” ফারসী শব্দ। শব- অর্থ রাত বা রজনী আর কদর অর্থ সম্মান, মর্যাদা, গুনাগুন, সম্ভবনা বা ভাগ্য। অর্থাৎ শবে কদর অর্থ হল মর্যাদার রাত বা ভাগ্য রজনী। শবে কদরের আরবী অর্থ হল লাইলাতুল কদর বা সম্মানিত রাত। আর এই রাতেই নাযিল হয়েছে মহামহিমের পক্ষ থেকে পবিত্র কুরআন মাজীদ। আল্লাহ বলেন- “নিশ্চই আমি কুরআনকে নাজিল করেছি এ সম্মানিত রাতে।আর মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম । এ রাতে ফেরেশতাগন জিবরাইল (আঃ) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন মহান প্রভু আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতি ক্রমে ও সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে এবং শান্তির ধারা স্থায়ী হয় উষা পর্যন্ত। (আল-কোরআন)
রাসুল (সঃ) বলেছেন – “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাত সমূহে শবে কদর কে অনুসন্ধান কর”।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসুল (সঃ) আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি তাহলে ঐ রাতে আমি আল্লাহর কাছে কোন দোয়া করব? রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন- “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি”। অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল ক্ষমা করতে ভালোবাসেন তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন। (ইবনে মাজাহ)
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা অনস্বীকার্য। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সঃ) রমজানের শেষ দশকে এ রাত পাওয়ার জন্য আজীবন ইতেকাফ করেছেন। এ কারনে রাসুলুল্লাহ (সঃ) তার উম্মত গনকে রমজানের শেষ দশকে এ রাতকে তালাশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেটা ইতেকাফের মধ্যে দিয়ে। কোরআন নাজিলের রাত লাইলাতুল কদর সবচেয়ে তাৎপর্য মন্ডিত রাত।
কদর রাতে ফজিলত
মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল হওয়ার কারনে অন্য মাসের চেয়ে রমজান মাস ফজিলতপূর্ন বরকতময় ও মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন- আমি কুরআন কে নাযিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জানো কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। (সূরা কদর- ১-৩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন- “এ রাতের ইবাদাত অন্য অন্য হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। তানবিরুল মিকবাস-৬৫৪পৃ:
লাইলাতুল কদরের রাতে অত্যাবশ্যকীয় আমল সমূহঃ
১. নফল নামাজ পড়া।
২. মসজিদে প্রবেশ করে ২রাকাত দুখুলিল মাসজিদ নামাজ আদায় করা।
৩. দুই দুই রাকাত করে মাগরীবের পর ৬রাকাত আওয়াবীণের নামাজ পড়া।
৪. রাতে এশা পরবর্তী তারাবিহ নামাজ পড়া।
৫. শেষ রাতে সাহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া।
৬. সম্ভব হলে সালাতুত তাসবিহ নামাজ পড়া।
৭. তাওবার নামাজ পড়া।
৮. সালাতুত হাজাত নামাজ পড়া।
৯. সম্বভ হলে সালাতুস শোকর ও অন্যান্য নফল নামাজ আদায় করা।
১০. কুরআন মাজিদ তেলাওয়াত করা (সূরা দুখান, মুজাম্মিল, মুদাচ্ছির, ইয়াছিন, ত্বহা, আর রহমান, ওয়াক্বিয়া, মুলক, কুরাইশ, কাফিরুন ও কুল সালাছা(ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়া।
১১. দুরূদ শরীফ পড়া।
১২. তাওবা, ইসতিগফার পড়া, সাইয়্যেদুল ইসতেগফার পড়া।
১৩. জিকির করা।
১৪. কুরআন ও সুন্নায় বর্ণিত দোয়া সমূহ পড়া।
১৫. পরিবার মা, বাবা ও মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করা।
১৬. বেশি বেশি দান সদাকা করা।
১৭. শরীয়ত স্বীকৃত ইতিবাচক কাজ করা।
Leave a Reply