নিজস্ব প্রতিনিধি: নির্যাতিত ও মিথ্যা মামলার শিকার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র দাসকে নি:শর্ত মুক্তি, হামলা ও মামলার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির তালা উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ পুলিশ সুপার মেহাম্মদ মতিউর রহমান ছিদ্দিকীর কাছে দাবি জানিয়েছেন। শনিবার সকাল ১১টায় তারা সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসে এ দাবি করেন শিক্ষক নেতারা।
শিক্ষক নেতারা বলেন, নিজের বড় মেয়ে রমা দাসকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে চাকরি দেওয়ার নামে ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র দাসের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেন ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইষ্টম কুমার দাস। চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরৎ চাওয়াকে কেন্দ্র করে ওই প্রধান শিক্ষকের কাছের লোক আকাশ দাসকে দিয়ে গত ১০মার্চ নিজ অফিস কক্ষে ডেকে নির্যাতন করিয়েছেন ইস্টম দাস। এঘটনায় সুভাষ দাস থানায় অভিযোগ করায় মামলা থেকে বাঁচাতে ইষ্টম দাস ও তার স্ত্রী অঞ্জলী দাসের পরিকল্পনায় গত ৭মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫জন শিক্ষকের সঙ্গে কারিকুলাম সংক্রান্ত উত্তরণ নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য চুড়ান্ত রিহার্সালে থাকার পরও ওই দিন দুপুর সোয়া ১২টায় ফতেপুর প্রাথমক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে নির্যাতনকারি আকাশ দাসের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে থানার ডেকে নিয়ে পরদিন ১৬ মার্চ গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে ঘটনা সঠিক নয় মর্মে ২৬ জন শিক্ষক, তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষিকা প্রতিবেদন দিয়েছেন। মামলার কারণে সুভাষ দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত বিলম্বিত হলে আর এক বছর পর এলপিআরে যাওয়া শিক্ষক সুভাষ দাসের বেতন ভাতা বন্ধসহ সমূহ বিপদ হবে।
শিক্ষক নেতারা আরও বলেন, ইস্টম দাস চাকরি দেওয়ার নামে বহু লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এমন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। পাটকেলঘাটার দাতপুর গ্রামের আজাহারুল ইসলামকে দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য ১০লাখ টাকা নেন ইষ্টম দাস। চাকরি না হওয়ায় টাকার পরিবর্তে চেক দেন ইষ্টম দাস। একপর্যায়ে আজাহারুল ইসলামের চেক ডিজঅনারের মামলায় (সিআর-১৯২/২১ পাটকেলঘাটা) ইষ্টম দাসের দুই মাস সাজা হওয়ার পাশাপাশি সমুদয় টাকা ফেরৎ দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। ওই মামলায় গত ৯এপ্রিল ইষ্টম দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জেল হাজতে পাঠায়। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে রয়েছেন। তবে মামলার বাদি আকাশ দাসের ছোট ভাই টেকনাফ থানার আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশে কর্মরত সহকারি উপ-পরিদর্শক প্রকাশ দাস পুলিশ প্রশাসনকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে চলেছেন।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষকমণ্ডলী ছিলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির তালা শাখার সভাপতি সূর্য পাল, সাধারণ শিক্ষক মঞ্জুরুল আলম, ১০৫নং ইসলামকাটি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক, নগরঘাটা গাবতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা, সহ-শিক্ষক সঞ্জয় কুমার দাস, মো. মফিজুল ইসলাম, সাঈদুর রহমান, মো. নজরুল ইসলাম, স্বপন কৃমার বাছাড়, রোকসানা আক্তার, মাহাবুবর রহমান, বাসুদেব সেন ও রেখা দাস।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা প্রলিশ সুপার মতিউর রহমান ছিদ্দিকিী বলেন, ৭মার্চের সুভাষ দাসের মোবাইল ফোনের অবস্থান যাঁচাই করা হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে যাঁচাই বাছাই করে ঘটনার সত্যতা না পেলে সুভাষ দাসকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
Leave a Reply