স্টাফ রিপোর্টার: গলার টনসিল অপারেশন করতে যেয়ে ভুলবশত শ্বাসনালী কেটে ফিরোজা বেগম নামে ৩ সন্তানের জননী ১ মহিলাকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।ঘটনা ধামাচাপা দিতে রোগীর কাগজপত্র গায়েব করে স্বজনদের ৫ লক্ষ টাকায় ম্যানেজ করে তড়িঘড়ি করে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে দাফন সম্পন্ন করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার (১০ মে) রাত ২ টার সময় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায় অনুমোদন বিহীন শেরে বাংলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। নিহত ফিরোজা বেগম (৪৫) কালিগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়নের পাইকাড়া রহিমপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের স্ত্রী। মামলা, হামলা এড়াতে সাতক্ষীরার সদর থানার ব্যাংদহা গ্রামের আবুল কাশেম গাজীর পুত্র ক্লিনিক মালিক সাইদুল ইসলাম নিজেকে কথিত সাংবাদিক পরিচয়ে উল্টো সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে তার ক্লিনিকে এই ধরনের কোন রোগী ভর্তি বা অপারেশন করার কথা অস্বীকার করেন। এ যেন ভূতের মুখে রাম নাম। সাইদুল ইসলাম এবং পাইকগাছার বহুল আলোচিত তানিয়া সুলতানের মালিকাধীন নলতা শেরে বাংলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরেজমিনে শনিবার বেলা ১১ টার দিকে গেলে নলতার হাবিবুর, মাসুম বিল্লাহ, আব্দুল কুদ্দুস, ফজলুর রহমান, হাফিজুর রহমান হাফিজ সহ একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানায় পাইকাড়া রহিমপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের স্ত্রী ফিরোজা বেগম দীর্ঘদিন যাবত গলায় টনসিলের যন্ত্রণা ভুগছিল। যন্ত্রণা সইতে না পারায় গত শুক্রবার সকালে প্রথমে নলতা চৌমুহনীতে অবস্থিত আব্দুল বারীর মালিকানাধীন আহসানিয়া ক্লিনিকে যায়। কিন্তু উক্ত ক্লিনিক স্থানান্তরের জন্য কাজ করার কারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শেরে বাংলা ক্লিনিকে অপারেশনের বা দেখানোর পরামর্শ দেয়। সেই মোতাবেক শনিবার সকাল ১০ টার সময় ফিরোজা বেগমকে নিয়ে তার স্বজনরা শেরে বাংলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যায়। ওই সময় ক্লিনিক মালিক সাইদুল ইসলাম টনসিল অপারেশনের জন্য ৪০ হাজার টাকা চুক্তি করে অপারেশনের কথা জানান। অপারেশনে রাজি হলে ক্লিনিক মালিক সাইদুল ইসলাম যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ডাক্তার শাহীন রেজা এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনেস্তেসিয়া ডাঃ তামিম ইকবালের কথা বলে তার পরামর্শ অনুযায়ী ফিরোজা বেগমকে ভর্তি করিয়ে অপারেশনের জন্য রাত আনুমানিক ২ টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে অপারেশনের সময় ভুলবশত শ্বাসনালী কেটে যাওয়ায় রোগী অচেতন অবস্থায় আর জ্ঞান না ফিরে রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়।ঐ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত সাতক্ষীরা সিবি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার আধা ঘন্টা আগে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান। বিষয়টি জানতে পেরে ক্লিনিক মালিক সাইদুল ইসলাম এবং তানিয়া সুলতানা মোটা অংকের টাকায় রোগীর স্বজনদের ম্যানেজ করে তড়িঘড়ি করে রাত ৪টার সময় ওই অ্যাম্বুলেন্স যোগে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পুলিশি ঝামেলা এবং লোক জানাজানি এড়াতে দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা করতে বলে এবং এ বিষয়ে পুলিশ বা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করে দেয়। এবং বলে পুলিশের ঝামেলা হলে লাশ কাটা ছেড়া হওয়ার ভয় দেখায়। এ ছাড়াও পুলিশ এবং সাংবাদিকদের ঝামেলা এড়ানোর জন্য রোগীর স্বজন দের কাছে শেরে বাংলায় ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর কোন ছাড়পত্র বা ব্যবস্থাপত্র ছাড়াও প্রমাণ লোপাট করার জন্য কোন কাগজপত্র দেওয়া হয়নি যাতে করে ওইগুলো নিয়ে কোথাও অভিযোগ করার সুযোগ না পায়। অনুমোদনবিহীন শেরে বাংলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কোন ডাক্তার ও নার্স না থাকায় প্রতিনিয়ত এই ধরনের দুর্ঘটনা এবং অপ চিকিৎসার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা, মৃত্যু বেড়েই চললেও দেখার কেউ নাই। ওই সময় রহিমপুর গ্রামে যেয়ে দেখা যায় ফিরোজা বেগমের দাফনের প্রস্তুতি চলছে এ বিষয়ে তার স্বামী আমজাদ হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি শেরে বাংলা ক্লিনিক এর কোন কাগজপত্র বা ব্যবস্থাপত্র, ছাড়পত্র দেখাতে পারেনি। তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান বাবা লাশ আবার কাঁটা ছাড়া হবে এ কারণে আমরা কিছু বলতে চাই না।তবে ক্লিনিক মালিক আমাদের বলছে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। ক্লিনিক মালিক সাইদুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি নিজেকে প্রথমে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জানান এই ধরনের রোগী আমার ক্লিনিকে কখনো ভর্তি হয়নি বা কোন অপারেশন করা হয়নি সব মিথ্যা বানোয়াট। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করে জানান আমার মুরুব্বী বারী ভাইয়ের আহসানুল্লাহ ক্লিনিকে ওটি না থাকায় তার অনুরোধে আমার ক্লিনিকে তার ডাক্তার নার্সরা ব্যবহার করেছে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না। প্রসঙ্গে আহসানুল্লাহ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর মালিক আব্দুল বারির নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান ফিরোজা বেগমকে নিয়ে আমার ক্লিনিকে সকাল ৯/১০ টার দিকে এসেছিল। যেহেতু আমার ক্লিনিক এর জায়গা পরিবর্তনের কাজ চলছে সেহেতু আমি প্যাথলজি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পাশে শেরে বাংলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার পরামর্শ দেই।এর পরে কি হয়েছে আমি বলতে পারব না তবে আমি শুনেছি ওই রুগীর ভুল অপারেশন, টনসিল কাটতে যেয়ে শ্বাসনালী কেটে ফেলায় মারা গেছে।এ প্রসঙ্গে কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহিন এর নিকট জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। তবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য বিভাগের তদারিকের দায়িত্বে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিকট কথা বলতে বলেন। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার বুলবুল কবিরের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান বিষয়টি আমার জানা নাই তবে খোঁজ নিয়ে তিনি ডাঃ শাহিন রেজার অপারেশনের কথার সত্যতা পান বলে জানান। বিষয়টি সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।
Leave a Reply