মোঃ ফরিদ উদ্দিন শ্যামনগর প্রতিনিধি: সম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে এসব সাফল্যের পিছনে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিয়ে কম দামে কৃষকদের সার সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের কয়েকগুণ দাম বাড়লেও কৃষকদের অসুবিধার কথা ভেবে সরকার এতদিন অভ্যন্তরীণ বাজারে অর্থাৎ কৃষক পর্যায়ে সারের দাম বাড়ায়নি, যার ফলে একদিকে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে কৃষক সরাসরি আর্থিকভাবে উপকৃত হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ শ্যামনগর উপজেলায় কতিপয় বিসিআইসির তালিকাভুক্ত কয়েকজন সার ডিলার কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টি করে
সরকার নির্ধারিত মূল্য ছাড়া বেশি টাকায় সার বিক্রি করছে। শ্যামনগর উপজেলায় আমনের ভরা মৌসুমে সার নিয়ে নয় ছয় শুরু হয়েছে। সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করায় ধানচাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। ইউরিয়া, এমওপি, টিএসপি, ডিএপি সার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তায় ৩০০-৪০০ টাকা বেশি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ডিলারদের জন্য বরাদ্দ করা ভর্তুকির সার সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে আমদানিকারকদের কাছ থেকে উপজেলার লাইসেন্সবিহীন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সার তুলে নিচ্ছেন। তাঁদের হাত থেকে সেই সার চলে যাচ্ছে কৃষক দের কাছে। এর ফলে ভুর্তুকির সার কৃষকদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোনো তদারকি নেই বলে কৃৃষকেরা অভিযোগ করেছেন।
ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধির কারণ কি জানতে চাইলে শ্যামনগর একজন সার ডিলার আলহাজ্ব মাহাবুবুর রহমান মোস্তফা জানান, শ্যামনগরে চাহিদার তুলনায় সার দেওয়া হয়েছে অর্ধেক।
মুন্সিগঞ্জ গ্যারেজ বাজারে কয়েকজন সার ব্যবসায়ীর সাথে কথা বললে তারা বলেন আমাদের সারের লাইসেন্স নাই তাই ডিলাররা আমাদের কাছে মেমো ছাড়া ১৪০০ টাকা করে ইউরিয়া সারের বস্তা বিক্রয় করছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিসিআইসি’র তালিকাভুক্ত ১২ জন সার ডিলার রয়েছেন। গত মাসে ইউরিয়া সারের চাহিদা অনুযায়ী সার দিতে পারিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক পর্যায়ে সরকার-নির্ধারিত প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ইউরিয়া সারের খুচরা মূল্য ১ হাজার ১০০ টাকা হলেও খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০০-১৪০০ টাকা, টিএসপি সারের খুচরা মূল্য ১ হাজার ১০০ টাকা হলেও খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকা, এমওপি খুচরা মূল্য ৭৫০ টাকা হলেও খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০০-১০০ এবং ডিএপি ৮০০ টাকা হলেও খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সরকারের পদক্ষেপ গুলো প্রশংসনীয় ছিল। অসাধু ডিলারদের কার সাজিতে কৃষকের কাঁচা হেসেলে আঁচ লেগেছে। সারের মূল্য বৃদ্ধিতে কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। কৃষক চরমভাবে দুর্দশার মধ্যে পড়বে সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বাড়বে খাদ্য উৎপাদন ব্যর্থ হবে এবং খাদ্য পণ্যের দাম আবারও বাড়বে। কৃষি অফিস বলছেন ডিলারাই সার সিন্ডিকেট করে কৃষক দের কে বেসামাল করার চেষ্টা করছেন।
ভুক্তভোগী কৃষকরা বলছেন বিসিআইসি ও বিএডিসি সার ডিলারদের তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব প্রাপ্ত ইউনিয়নে সার বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাশ মেমোর ছাড়া সার ক্রয় করা যাবে না। কৃষকদের তালিকা নিয়মিতভাবে উপজেলা কৃষি অফিসে জমা দিতে হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক খুচরা সার বিক্রয় কেন্দ্র থাকতে হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে তাহলেই কৃষক মাঠ পর্যায়ে সুফল পাবে।
Leave a Reply