তুহিন হোসেন:
আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো সাতক্ষীরায় পাকা আম সংগ্রহ। সাতক্ষীরা সদরের কুখরালী এলাকায় শুক্রবার (৫ মে) সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে আমবাগান থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই সহ বেশ কয়েকটি জাতের আম সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদর কৃষি কর্মকর্তাসহ আম বাগানের মালিকরা উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকদের স্বার্থে আগামীতে আরো সর্তকতার সাথে আম ভাঙার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে। জেলা কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সাতক্ষীরায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এবছর ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে ১৩ হাজার ১০০ জন চাষী আম চাষ করেছেন।
সুত্র জানায়, সাতক্ষীরায় এবার প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫শ মেট্রিক টন। বিশেষজ্ঞদের মাতে সমুদ্র পৃষ্টের খুব নিকটের জেলা হওয়ার কারণে এখানে শীতকাল আগে চলে যায় এবং দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে মৌসুমী বায়ু প্রবাহের তারতম্য ঘটে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর চেয়ে সাতক্ষীরা জেলার আম অন্তত ৩ সপ্তাহ আগে পাকে। তাছাড়া এক এক গাছের আম পাকার সময়ও ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত ক্যালেন্ডারের কারনে আম চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। ফলে প্রশাসন আম ক্যালেন্ডার ৭দিন পিছিয়ে শুক্রবার থেকে আম ভাঙার দিন নির্ধারণ করে। এর আগে আম পাড়ায় তা কথিত রাসায়নিক মিশ্রণের অভিযোগে জেলায় কয়েক শত টন আম বিনষ্ট করে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত ১২ মে তারিখ থেকে গোবিন্দভোগ সহ বিভিন্ন জাতের আম সংগ্রহের কথা ছিলো। কিন্তু এসব আম গরমে তাড়াতাড়ি পেকে যাচ্ছিলো। এছাড়া রাসায়নিক দিয়ে পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করছিলো বেশ কিছু ব্যবসায়ী। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার কেজি অসময়ে সংগ্রহ করা আম ও রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম জব্দ করে ধ্বংস করেছে।প্রথম দিনেই সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া, দেবহাটাসহ সাত উপজেলায় আম চাষিরা সীমিত পরিমাণে আম সংগ্রহ করেছেন। বাজারে প্রতি মণ গোবিন্দভোগ ও গোাপালভোগ, বোম্বাই আম বিক্রি হয়েছে ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকায়।
সাতক্ষীরা সদরের আম চাষী সায়েদুর রহমান রানা, মোকছেদ আলীসহ অন্যরা জানান, মৌসুম শুরুর পূর্বে বাজারে আম উঠায় সাতক্ষীরার আমের চাহিদাও একটু বেশি। তবে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৫ মে এর পরে হিমসাগরসহ অন্যান্য আম সংগ্রহ করলে বাজারে সাতক্ষীরা আমের চাহিদা কমবে অন্য দিকে বৈরি আবহাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে।তালা উপজেলার আম চাষি পান্না জানান, এ বছর তিনি দুই বিঘা জমিতে আম চাষ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ফলনও পেয়েছেন বাম্পার। তিনি জানান কৃষি সম্প্রসাররণ অফিসের পরামর্শে সঠিকভাবে রোগ-বালাই দমন করে বিশমুক্ত আম উৎপাদন করেছেন। তবে কাল-বৈশাখী ঝড়ের শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এক সপ্তাহ এগিয়ে ১২মের পরিবর্তে ৫ মে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, গোপালখাস, বৈশাখীসহ স্থানীয় জাতের আম সংগ্রহের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর দিন অপরিবর্তিত রেখে ২৫ মে হিমসাগর, ল্যাংড়া ১ জুন এবং আম্রপালি আম সংগ্রহের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ জুন।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, সাতক্ষীরার আমের গুণগত মান ধরে রাখতে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ তৎপর রয়েছে। কেউ যেন অপরিপক্ব রাসায়নিক মিশ্রিত আম বাজারজাত করতে না পারে সে বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলায় মোট ৭০ মেট্রিকটন অপরিপক্ব আম অভিযান চালিয়ে তা বিনষ্ট করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় আমের উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন জানান, সাতক্ষীরাতে এবছর গত বারের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ আম বেশি ফলন হবে। বিষমুক্ত ও গুণগত মানের আম বাজারজাত করার লক্ষ্যে কৃষিবিভাগ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ সিদ্ধান্তে আম সংগ্রহের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনে আলোচনা করে আম সংগ্রহের দিন এগিয়ে আনা যাবে। এছাড়া ইতোমধ্যে ২০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানির জন্য আদেশ পাওয়া গেছে। তবে রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়বে।
Leave a Reply