ডুমুরিয়া প্রতিনিধি: খুলনার ডুমুরিয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করা এবং ইট ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের দায়ে ৬টি ইট ভাটায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
সোমবার (৩ফেব্রুয়ারী) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত’র পরিচালিত অভিযানে ১টি ইট ভাটার চিমনি ও চুল্লি ভেঙ্গে ফেলা এবং ৫টি ইটভাটার কাঁচা ইট পানি ছিটিয়ে ও ট্রাক্টর দিয়ে চষে বিনষ্ট করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম এবং ডুমুরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আসাদুর রহমান।
অভিযানে ভদ্রা নদীর জায়গা দখল করে স্থাপিত খর্ণিয়া এলাকার মেরী ব্রিকস নামে একটি ইটভাটার চিমনি ও চুল্লি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া ওই এলাকার শাহাজান জমাদ্দারের মালিকানাধীন নুরজাহান ব্রিকস ও সান ব্রিকস, রানাই এলাকায় আব্দুল লতিফ জমাদ্দারের জে,বি ব্রিকস, আমিনুল ইসলামের মালিকানাধীন লুইন ব্রিকস, চহেড়া এলাকায় অবস্থিত গাজী আব্দুল হকের মালিকানাধীন সেতু ব্রিকস-৪ এ অভিযান পরিচালনা করে সরকারি নদীর জায়গা দখল করে প্রস্তুতকৃত কাঁচা ইট পানি ছিটিয়ে এবং ট্রাক্টর দিয়ে পিষিয়ে বিনষ্ট করা হয় এবং ইটভাটা মালিক পক্ষের ইট ভাটা আর পরিচালনা না করার মুচলেকা দেয়ার শর্তে অভিযান স্থগিত করা হয়।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারী তারিখে ওই ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে মেরী ব্রিকস, জে,বি ব্রিকস, লুইন ব্রিকস, সেতু ব্রিকস, স্টোন ব্রিকস গুটুদিয়া এলাকার জে,সি ব্রিকস, শোলমারী নদী তীরবর্তী এন,কে,বি ব্রিক্সস এস,বি ব্রিক্সস এবং সেতু ব্রিক্সস এ অভিযান চালিয়ে মোট ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য্য করে আদায় করা হয়।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া খর্ণিয়া, গুটুদিয়া ও রুদাঘরা ইউনিয়ের বিভিন্ন এলাকায় ভদ্রা ও হরি নদীর চর ভরাটিয়া জমির কিছু অংশ দখল করে গড়ে উঠে বেশ কয়েকটি ইট ভাটা। ইট ভাটাগুলোর লাইসেন্স এবং পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্রের মেয়াদ ৩/৪ বছর পূর্বে উত্তীর্ণ হলেও অবৈধভাবে তা পরিচালিত হয়ে আসছে। আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন পরিবেশ দপ্তরের সহকারি পরিচালক পারভেজ আহম্মেদসহ এনফোর্সমেন্ট টীম, থানা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা।
প্রসঙ্গত: ডুমুরিয়া উপজেলার প্রবাহমান বিভিন্ন নদীর চর ভরাটিয়া জমি এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধভাবে দখল করে ইট ভাঁটা পরিচালনা করে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হরি ও ভদ্রা নদীর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য জনস্বার্থে সংগঠনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়ার আইনজীবী মঞ্জিল মোরশেদ রীট পিটিশন দায়ের করেন।
এক পর্যায়ে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর মহামান্য হাইকোর্ট রীট পিটিশনটি শুণানীন্তে পরবর্তি ৬০ দিনের মধ্যে ১৪টি ইটভাটার মধ্যে সরকারি জায়গায় স্থাপিত সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। বিচারপতি মোঃ মজিবর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্যার বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়া ইট ভাঁটা গুলো হচ্ছে ভদ্রা নদীর তীরবর্তী এসবি ব্রিকস, কে.পি.বি ব্রিকস, সেতু-১ ব্রিকস, নূরজাহান ব্রিকস, কে.বি-২ ব্রিকস, সান ব্রিকস, এফএমবি ব্রিকস, কে.বি ব্রিকস, আল-মদিনা ব্রিকস, মেরি ব্রিকস জে.বি ব্রিকস, লুইন ব্রিকস, হরি নদী তীরের সেতু-৪ ব্রিকস এবং টিএম.বি ব্রিকস। আরো জানা যায়, এর আগে হাইকোর্ট রুল জারি করে হরি ও ভদ্রা নদীর সীমানায় সিএস, আরএস রেকর্ড অনুসারে জরিপ করে দখলদারদের তালিকাসহ ৯০দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে খুলনা জেলা প্রশাসন ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খুলনা পওর বিভাগ-১, পাউবো খুলনাকে আহ্বায়ক এবং সার্ভেয়ার, খুলনা পওর বিভাগ-১, ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এবং বটিয়াঘাটা উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ারকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে যৌথভাবে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেন আদালত। জেলা প্রশাসন অক্টোবর মাসে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে।
পরবর্তিতে হাইকোর্ট ভদ্রা ও হরি নদির তীরবর্তি ১৪টি ইট ভাটায় সরকারি জায়গা দখল এবং পরিবেশ দপ্তরের ছাড়াপত্রবিহীন ইট ভাটাগুলো বন্ধে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। যার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সরকারি জমি উদ্ধারে ৬টি ইট ভাটা উচ্ছেদ এবং ৮টি ইট ভাটা সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু অসাধু ভাটা মালিকরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাদের ইট ভাটাগুলো পরিচালনা অব্যহত রেখেছে।
Leave a Reply