আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অতিরিক্ত কাজের চাপ আর প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে ছোটা জীবন; দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষদের অবসর মেলাই ভার। তাই দেশটির অধিকাংশ মানুষই ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ঘুম বঞ্চিত জাতি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। দিন দিন দেশটিতে ঘুমহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলছে। জি ইউন নামের একজন দক্ষিণ কোরিয়ান জনসংযোগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কর্মঘণ্টা কঠোর হওয়ার পর থেকেই তার ঘুমে সমস্যা হচ্ছে। তিনি আর কোনোভাবেই বিশ্রাম পাচ্ছেন না, স্বস্তি নেই। সকাল সাতটা থেকে ১০টা পর্যন্ত তাকে কাজ করতে হয়। এরপরও নানা কাজের প্রয়োজনের তার বস তাকে প্রায়ই মাঝরাতে ফোন দেন, কিছু কাজ করে দিতে বলেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রায় সময়ই এমনটা ঘটে, আমি মাঝেমধ্যে ভুলেই যাই অবসর আসলে কী?’
গ্যাংনাম জেলার ড্রিম ¯িøপ ক্লিনিকের চিকিৎসক জি হিয়ন লি জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে তার কাছে এমন রোগীও আসেন যারা ঘুমানোর জন্য রাতে ২০টার বেশি ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকেন।এই চিকিৎিসক বলেন, ‘সাধারণত ঘুমাতে সময় লাগে, তবে কোরিয়ানরা বাস্তবে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চান, তাই তারা ওষুধ নেন।’
ঘুমের ওষুধ সেবন করাটা দক্ষিণ কোরিয়ায় মহামারী রূপ নিয়েছে। কোন সরকারি তথ্য নেই তবুও ধারণা করা হচ্ছে দেশটিতে এক লাখের বেশি মানুষ ঘুমের ওষুধে আসক্ত। তারপরও ঘুমাতে না পেরে অনেকে অতিরিক্ত মদ্যপান করেন। যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
চিকিৎসক জি হিয়ন লি বলেন, ‘অনেকেই ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটেন। তারা ঘুমের মধ্যেই ফ্রিজের কাছে যায়, অচেতন অবস্থাতেই অনেক কিছু খান। অনেক সময় তারা রান্না না করা খাবারও খেয়ে ফেলেন। এমনকি সিউলে ঘুমের মধ্যে হাঁটা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটানোর রেকর্ডও আছে।’ এই চিকিৎসকের অনেক রোগী তাকে জানিয়েছে, গেল কয়েক দশক ধরে তারা রাতে মাত্র হাতে গোনা কয়েক ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘এখনও তারা কাঁদছেন, আশায় বুক বাঁধছেন। সত্যিই এটা দুঃখজনক অবস্থা।’
একটা সময় অন্যতম গরীব দেশ ছিল দক্ষিণ কোরিয়া, সেখান থেকে উন্নতির বর্তমান অবস্থায় আসতে, আধুনিক প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়াতে মানুষকেও ছুটতে হয়েছে মেশিনের মতো। আর এই ছুটতে গিয়েই কর্মক্লান্ত হয়ে পড়ছে দক্ষিণ কোরিয়ানরা। তাই এখন ঘুমহীনতার মতো বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষদের তেমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। তাই পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।সূত্র: বিবিসি
Leave a Reply