আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ ডেস্ক: সাতক্ষীরার মাঠে মাঠে ইরি বোরো ধান কাটার আনন্দ উৎসব চলছে। গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রতাপ ও রোজার কষ্ট মাথায় নিয়ে মনোমুগ্ধ সোনালী ধানের উচ্ছল তরঙ্গে কৃষকরা একাকার। কষ্ট আর ক্লান্তি যেন তাদের স্পর্শ করতেই পারছে না। দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম, পরিচর্যা আর বিনিয়োগ ঘরে ওঠার মহেন্দ্রক্ষন, উৎফুল্ল চিত্তে তাই চাষিরা দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে জানান এবার প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা ইরি বোরো ধানকে ছুতে পারেনি, বিশেষ করে কাল বৈশাখি এবং শিলাবৃষ্টি ফলতে যাওয়া বা পাকা ধান কে ক্ষতি করতে পারেনি আর তাই ফলন অনেক অনেক উচ্চতায়। কৃষকরা উৎফুল্ল আর আনন্দিত এরই মধ্যে শঙ্কা ও প্রকাশ করে বললেন সবে মাত্র ধানকাটা শুরু হয়েছে পরিপূর্ণতা আনায়নে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে বিধায় আগামী দিন গুলো আবহাওয়া অনুকূলে থাকা বিশেষ প্রয়োজন, জেলার মাঠে মাঠে দিগন্ত বিস্তৃত ধান ক্ষেত গুলোতে পাকা ধানের যে সোনালী হাসি সেই সাথে তাপদাহ সব মিলে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ বিরাজ করছে। দিন ব্যাপী কৃষক মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত আর গৃহিনীরা পাকা দানের সোদা গন্ধকে অবলম্বন করে ঘর গৃহস্থালির চিরাচারিত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত, ধান মাড়াইয়ে ও ধান সেদ্ধ করার কাজে মহাব্যস্ত, সামনে ঈদুল ফিতর আর তাই ব্যবস্তারও শেষ নেই। কৃষানীদেরও সকলে মিলে মিশে ধান মাড়াই ও সেদ্ধকাজে অতি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। ধান সেদ্ধ করার পরবর্তি আয়োজন রৌদ্রে শুকানো ও মেশিনে পাঠিয়ে চাল তৈরী করা। ধান সিদ্ধ করার ক্ষেত্রে ও নিয়মের তারতম্য যেন বত্যয় না ঘটে সে বিষয়েও সতর্ক কৃষানীরা। সাতক্ষীরা বরাবরই শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত গত কয়েক বছর যাবৎ এই পরিধি ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত ঘটেছে। এই জেলার উল্লেখযোগ্য জমি লবনাক্ত পানি বেষ্টিত চিংড়ী চাষ হয় সেই চিংড়ী ঘেরে লবনাক্ত সহনীয় ইরি বরো ধান চাষ হওয়ায় সাতক্ষীরায় অতীতের যে কোন সময় অপেক্ষা অধিকতর ইরি বরো ধান উৎপাদন হচ্ছে। গত কয়েক দিন যাবৎ সাতক্ষীরার সদর উপজেলা সহ অন্যান্য উপজেলার ধান ক্ষেত পরিদর্শন করে দেখা গেছে কোন কোন ধানক্ষেত সংলগ্ন এলাকাতে কাটা ধান মাড়াই চলছে। ধানের বিচুলীরও অর্থনৈতিক গুরুত্ব কম নয়, গো খাদ্য হিসেবে এই বিচুলী ব্যবহৃত হওয়ায় ধান মাড়াই এর পর পরই তা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ঘরে ঘরে সাজ সাজ রব, আনন্দের ছোয়া, আনন্দগ্রোত, এরই মাঝে প্রান্তীক চাষিদের দুশ্চিন্তা মহাজনের ধান, ব্যাংক এবং এনজিও ঋন, তারা অনেকে বিভিন্ন ভাবে ঋন দায়ী হয়ে চাষাবাদ করে সময় এসেছে ঋন পরিশোধের। কৃষি দপ্তর অবশ্য দুঃস্থ ও প্রান্তীক পর্যায়ের কৃষকদের মাঝে সার, বীজ সরবরাহ করেছিল, কৃষকদের প্রত্যাশা অধিকতর ভর্তুকি ও বিনা সুদে ঋন পেলে তারা উৎপাদনের সবটুকুই ভোগ করতে পারতেন। ধান কাটা শুরু হওয়ায় হঠাৎ করে শ্রমিক মূল্য বেড়ে গেছে। কৃষকরা জানান শ্রমিকের চাহিদা এবং রোজার কারনে ধান কাটা শ্রমিকমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি মহিলা শ্রমিকরাও ধানকাটা কাজ করছে। এক্ষেত্রে পুরুষের অপেক্ষা মহিলা শ্রমিক মূল্য অপেক্ষাকৃত কম। বিঘা প্রতি ধান কাটতে শ্রতিক মুল্য দিতে হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকার কাছাকাছি। বর্তমান সময়ে ধানমূল্য অন্যান্য বছর অপেক্ষা বেশী হওয়ায় সঙ্গত কারনে কৃষকরা খুশি, কেউ কেউ ধান মাড়াই করার পর পরই তা পাইকার ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করছে আবার অনেকে গোলায় ভরে রাখছে আগামীর জন্য আবার সেদ্ধ শুকানো ও চাল তৈরীর কাজে নিয়োজিত কৃষকদের উল্লেখযোগ্য অংশ, সাতক্ষীরার কৃষকরা ইদুরের উৎপাতে এবার বিশেষ ভাবে অস্থির ছিল আর তাই ইদুরমারার যন্ত্র ব্যবহারে সফল হয়েছে পোকা মাকড়ের উপদ্রব ও ছিল ব্যাপক বিশেষ করে বøাস্ট রোগ ক্ষতির কারন হিসেবে দেখা দেয়, কৃষকের সব স্বপ্ন একাকার হয়ে স্বস্তির ছোয়ায় ভর করেছে। ফলন ভাল হওয়ায় কৃষকরা খুশি, আবহাওয়ার ভাল থাকাই ফলন ভাল হয়েছে। সাতক্ষীরার অর্থনীতিতে ইরি বরো ধান কাটা ও ঘরে তোলার ঘটনা বিশেষ ভাবে নাড়া দিচ্ছে। কৃষকের বর্তমান মহা ব্যস্ততায় একাকার হয়ে মিশেছে শ্রমিক শ্রেনি ঋন পরিশোধ লাভবান, অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। দিনে দিনে ধান কাটার উৎসব মহাউৎসবে পরিনত হতে চলেছে।
Leave a Reply