তুহিন হোসেন:
সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলার দেশী মাছের আশ্রয় ও বংশ বিস্তারের অন্যতম আধার নদীর-নালা ও খাল অবৈধ জালের দখলে। এতে নিধন হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মা মাছসহ সব ধরনের মাছ। ফলে পুঁটি, কৈ, মাগুর, শিং, টেংরা, ডারকা, মলা, ঢেলা, শৌল, বোয়াল, আইড়, চিংড়ি, চেং, টাকি, গতা, পোয়া, বালিয়াসহ প্রভৃতি দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা জেলার বিভিন্ন এলাকায়। মাঝে মাঝে অভিযান দেখা যায়।
দেখা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা, কুশখালী, বৈকারী, ঘোনা, ভোমরা, আলিপুর, ধুলিহর ও ফিংড়ী ইউপির বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীর নালা ও খালে মাছ মারার ফাঁদ বসিয়েছে কতিপয় মাছ শিকারি। যারা খড়া, বানা, দারকি, মাছ ধরার স্থায়ী ব্যবস্থা করে নিয়মিত ধরছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। ঘন ঘন এসব স্থাপনের কারণে ওইসব জলাধারগুলোর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি দেশীয় মাছসহ অন্যান্য উপকারী জলচর প্রাণীর বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাধাহীনভাবে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ নিধন অব্যাহত থাকায় আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে এসব স্থানের মাছের উৎপাদন।
আশে পাশে ছোট বড় নদীর নালা ও খালগুলোতে শতাধিক অবৈধ কারেন্ট জাল ও দারকি বসানো হয়েছে। এ কারণে জাল বসানোর স্থানে খাল ও নালায় বানা লাগিয়ে মাছের চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রবাহমান খাল ও নালা ছোট ছোট আবদ্ধ ডোবায় পরিণত হয়েছে।
স্বাভাবিক গতিরোধ করায় বেলান নদীতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় আশপাশের ফসলের ক্ষেত জলমগ্ন থাকায় ক্ষতিও হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ ঘটছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেশী মাছের আস্তানা।
কয়েকজন মৎস্য চাষি জানায়, মৎস্য অভয়াশ্রম রক্ষণাবেক্ষণ বা জলাশয়গুলোর স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মৎস্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগই নেই। অবৈধ জালে খাল বিল ছেয়ে গেছে এর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে দেশি মাছের চাহিদা অনেক। দামও অনেক বেশি। তাই এসব মাছ চাষ করার প্রতি মাছ চাষিদের আগ্রহ থাকতে হবে।
সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, অবৈধ জাল ব্যবহার এমনিতেই অপরাধ। এবছর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে প্রায় শতাধিক কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার্থে সকলকে সচেতন হতে হবে। নতুবা দিনদিন এই মাছগুলো হারিয়ে যাবে।
Leave a Reply