শেখ রাজু রায়হান কলারোয়া প্রতিনিধি: আগামীকাল ১৩ ডিসেম্বর, বুধবার মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুল গফ্ফার (৮০) এঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছর (২০২২) আজকের এই দিনে মহান বিজয় দিবসের মাত্র দুই তিন আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। যাঁদের নিরন্তর লড়াই ও প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, তাঁদেরই একজন বীর যোদ্ধা যুদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুল গফ্ফার। যে ডিসেম্বরে যাঁর বীরত্বে আমরা কলারোয়াকে পাক হানাদার মুক্ত করেছিলাম। তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। এক বছর পেরিয়ে গেল তাঁর দীর্ঘ কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে।
লড়াকু যোদ্ধা আব্দুল গফ্ফার মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের বহুড়া (দক্ষিণ) গ্রামে। তাঁর জন্ম ১৯৪২ সালের ১৩ এপ্রিল। তাঁর পিতার নাম মরহুম তছিরুদ্দিন গাজী। জানা যায়, স্কুল জীবন থেকেই তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৫৮ সালে যশোরের শার্শার বাগআঁচড়া হাইস্কুলে পড়াশুনা করাকালীন তিনি ন্যাপ (ভাসানী) করতেন। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। উত্তাল একাত্তরের মার্চে তিনি যান ঝিকরগাছার লাউজানি এলাকায়। পরে তিনি ভারতের হাকিমপুর এলাকার স্বরূপদহে যান। ভারতের বসিরহাট সংলগ্ন টাকিতে শাহাজাহান মাস্টারের নেতৃত্বে আড়াই শ’র মতো মুক্তিকামী যোদ্ধা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। একাত্তরের ২৯ মে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী ভোমরা সম্মুখ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে প্রায় দুই থেকে আড়াইশ’ পাক সেনা নিহত হয। ভোমরার এই সাফল্য মুক্তিযোদ্ধাদের মানসিক শক্তি বাড়িয়ে দেয় অনেকখানি। ভোমরার সফল যুদ্ধ শেষে কমান্ডার আব্দুল গফফার ফিরে আসেন কলারোয়ার বালিয়াডাঙ্গায়। সেখানে ১৭ অক্টোবর পাক বাহিনীর সাথে শুরু হয় ভয়াবহ এক সম্মুখ যুদ্ধ। দুই দিন ধরে চলে এ যুদ্ধ। যুদ্ধে অংশ নেন ৩/৪শ’র মতো মুক্তিযোদ্ধা। থেমে থেমে চলে বালিয়াডাঙ্গার এই যুদ্ধ। এই যুদ্ধে মারা যায় অগুনতি পাকসেনা। শহিদ হন ২৯/৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা। এরপর সেখান থেকে চন্দনপুর, ইলিশপুর, বাগআচঁড়া, খোরদো, সোনাবাড়িয়া, ঝাঁপাঘাট এলাকায় যুদ্ধ করেন তিনি। একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর কলারোয়া পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হওয়ার পরও তিনি থেমে থাকেননি। যোগ দিয়েছেন মনিরামপুরসহ একাধিক এলাকা মুক্ত করার সংগ্রাম ও যুদ্ধে। প্রয়াত কমান্ডার আব্দুল গফফারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৩ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে কলারোয়ার কোমরপুর এতিমখানায় শিশুদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পারিবারিকভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর পুত্র এশিয়ান টিভির সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম লিটন।
Leave a Reply