জহর হাসান সাগর: সাতক্ষীরার তালায় কয়েকদিন ধারাবাহিক বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে বোরো ধান ক্ষেতের কাটা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি সহ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে কৃষকরা।উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর কৃষকদের ধান বাম্পার ফলনে আশানুরূপ ফসল পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবছর লক্ষ্যমাত্রা বর্জনের সম্ভবনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে পবিত্র রমজান মাসে তীব্র তাপদাহের ফলে ঈদের আগেই অনেক কৃষক আগাম ধান কাটা শুরু করেছিল। উপজেলার প্রায় সকল ইউনিয়নে বোরো ধান পানিতে ডুবে গেছে, গাছ হয়ে যাচ্ছে ধানে, চরম ক্ষতিগ্রস্ত সম্মুখীন কৃষকরা। আচমকা বৃষ্টিতে শেষ করে দিয়েছে কৃষকের স্বপ্ন। গলে পচে পড়ছে তাদের সোনার ফসল।ধান রক্ষা করতে ঘুম নেই কৃষকদের চোখে। বৃহস্পতিবার ৫ মে সকালে তালার মির্জা পুর এলাকার কৃষক সঞ্জয় কুমার ঘোষ আক্ষেপ করে বলেন তার ৫ বিঘা জমিতে বোরো আমন ধানের আবাদ ছিল। ৫ বিঘার পাকা ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কেটে ক্ষেত থেকে উঠিয়ে রাস্তায় রোদে শুকাতে দিয়েছেন ।বৃষ্টির কারণে তার ক্ষেতে হাঁটুপানি জমেছে।
অপর দিকে উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে জানা গেছে মেঘলা আকাশ। এমন অবস্থায় শ্রমিকও পাচ্ছেন না । বৃষ্টিতে ডুবলো পাকা ধানের ক্ষেত। বিপদে আছেন অনেক কৃষক। অনেকে জমিতে এবার ধান করেছিলো। ধান কাটাও হয়েছে। কিন্তু ধান বাড়িতে আনতে পারেননি। ক্ষেতে পানি জমে কাটা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ ধান ঘরে তুলেছেন কেউ বা তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন সময়ে এ দুর্ভোগে পড়ে হতাশ উপজেলার কৃষকেরা।
বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যাওয়া মাঠের ধান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকেরা। ঝড়ো বৃষ্টিতে ক্ষেতের ধান গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এরপর আবার ভারী বর্ষণ হওয়ায় ক্ষেতগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে শ্রমিককে অতিরিক্ত মজুরি দিতে হচ্ছে অনেককে। ভেজা ধান শুকানো নিয়েও রয়েছে বেশ দুর্ভোগ। কয়েক মাস পরিশ্রম আর বিনিয়োগের ফল ঘরে তোলার সময়ে এমন দুর্দশায় পড়তে হয়েছে কৃষকদের। একদিকে শ্রমিক সংকট, অপরদিকে ধান কেটে বাড়ি আনতে তিনগুণ পরিশ্রমের পরও সোনালি ফসল ঘরে তুলতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজারও কৃষককে। বৃষ্টি শুরুর আগেই যাদের ধান কাটা শেষ হয়েছে তাদের অনেকেই ধান শুকাতে পারেনি। ফলে নষ্ট হয়ে গেছে ধান। বৃষ্টিতে ডুবলো পাকা ধানের ক্ষেত এতে কষ্টের ফলস তোলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে প্রান্তিক চাষিরা তাদের দাদন ব্যবসায়ী মহাজনদের দাদনের ধান ও সুদের চিন্তায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কারণ, বেশিরভাগ প্রান্তিক চাষি স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে মৌসুমের শুরুতে দাদন নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু এখন ধান ঘরে তুলতে না পারায় উভয় সংকটে পড়েছেন তারা। কৃষকরা এবছর সহজ উপায়ে কৃষি ঋণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
Leave a Reply