তুহিন হোসেন: স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনী। এককথায় সব কাজই হবে স্মার্ট। যেমন স্মার্ট শহর ও স্মার্ট গ্রাম বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট পরিবহন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট সংযোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন বর্তমান সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ দেশের মানুষের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত একখন্ড স্বাধীন মানচিত্র। এ মানচিত্রের স্বাধীন পতাকা আজ আকাশে এত সহজেই ওড়েনি, রয়েছে এর পেছনে অনেক ত্যাগ ও ইতিহাস। এ দেশের মানুষের মুক্তির দিশারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হৃদয়ে আঁকা ছোট্ট একটি নাম বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ ও পতাকা। বঙ্গবন্ধুর গড়া এই স্বাধীন দেশটির মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার ধ্যান-ধারণা এ দেশের মানুষের কল্যাণ। এ দেশের মানুষের কল্যাণার্থে নানা ধরনের উন্নয়নমুখী কাজের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। আমরা এখানেই থেমে থাকিনি, ২১০০ সালের ব-দ্বীপ কেমন হবে- সে পরিকল্পনাও নিয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু হবে। সেখানে নাগরিকরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে এবং এর মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতি পরিচালিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এবং সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যেই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে। বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে তরুণ প্রজন্মকে সৈনিক হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে তোমাদের (তরুণদের) স্মার্ট নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত হতে হবে।
রূপকল্প ২০৪১ বা বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত এবং জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল কর্তৃক প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থানকে আরো দৃঢ় করে গড়ে তোলার জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা। ২০২২ থেকে ২০৪৪ সাল, এই বাইশ বছরের কৌশলগত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের লক্ষ্য শিল্পায়নের মাধ্যমে উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের প্রসারকে উৎসাহ দেয়া রূপকল্প ২০৪১-এর উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যটি সফল হলে এ দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। তাই এ মিশনটি সফল করার জন্য শুধু সরকার নয়, জনগণকেও একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। দেশে শিক্ষিতের হার বাড়ছে, সেই তুলনায় তাদের কর্মসংস্থানের হার বাড়ছে না। ফলে দিন দিন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের মধ্যে চাকরি না করে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা খুবই কম।
বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, দেশে শ্রমশক্তির মোট পরিমাণ ৫ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে কাজ করছে ৫ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার। এর অর্থ বেকারের সংখ্যা মাত্র ২৬ লাখ ৮০ হাজার। দেশে বেকারের তথ্য সর্বশেষ ২০১৬ সালে শ্রমশক্তি জরিপ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সেটির ফল প্রকাশ করা হয় এক বছর পর ২০১৭ সালে, কিন্তু পাঁচ বছর ধরে দেশে আর এই জরিপ হয়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাগত হিসাবটার আপডেট জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত। বর্তমানে সংখ্যাটা আরো অনেক হারে বেড়ে গেছে।
দেশে শিক্ষিত বেকারদের জনসম্পদে পরিণত করা দরকার। শিক্ষিতদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু জমি বাড়ছে না, তাই অল্প জমিতে অধিক পরিমাণে ফসল ফলানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পোশাক শিল্প, শ্রমিকদের আরো আধুনিকায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের দেশের অর্থনীতির চাকা আরো সচলে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশের প্রতিটা সেক্টরের সার্বিক উন্নয়ন ও দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে। দেশের উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণের সার্বিক প্রয়াস অব্যাহত রেখে সরকারের পাশাপাশি একযোগে রূপকল্প ২০৪১-এর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে সোনার বাংলাকে সোনার খনিতে রূপান্তরিত করতে হবে।
Leave a Reply