জহর হাসান সাগর: কয়েকদিন মুষলধারা বৃষ্টিতে ও বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনে তালায় ৯০৫ হেক্টর মৎস্য ঘের তলিয়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন মৎস্য চাষীরা। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোঃ রাসেল ও উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) আব্দুল্লাহ আল-আমিনের নেতৃত্বে অবৈধ নেট-পাটা অপসারণ সহ পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতার স্থান সমূহ অপসারণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তালা উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য মতে জানা গেছে, চলতি বছরে তালা উপজেলায় মিঠা ও লোনা পানির ৭৭৪৫ হেক্টর জমিতে মাছ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে মিঠা পানির ৬৪৫০ হেক্টর ও লোনা পানির ১২৯৫ হেক্টর জমিতে মৎস্য চাষ করেছেন মৎস্য চাষিরা। যার অনুমানিক লক্ষ্যমাত্রা ১,৭৬,৬৪০ কেজি মাছ নির্ধারণ করা হয়েছে। বেসরকারী হিসেবে ৪ হাজার হেক্টর জমির মৎস্য ঘের তলিয়ে সরকারী ও বেসরকারী মিলিয়ে শত কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টিতে ও বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের ফলে তালা উপজেলার ৯০৫ হেক্টর আয়তনের মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার সর্বমোট মিঠা পানি ও লোনা পানির ৭৭৪৫ হেক্টর, এর মধ্যে প্রায় এর মধ্যে ১০২৭ টি মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নগরঘাটা,ত্রিশ মাইল, মাগুরা, খলিষখালি, ইসলামকাটি, তেঁতুলিয়া,সরুলিয়া, খলিলনগর, খেশরা,ও তালা সদর ইউনিয়নের মৎস্য চাষিদের।
এদিকে,উপজেলার সকল মৎস্য ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণের বর্ননা দিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন তালা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা। জলাবদ্ধতা নিরসনে তালা উপজেলা প্রসাশন নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। প্রশাসনের উদ্যোগে তালার গোপালপুর স্লুইচ গেটে পলি অপসারণের জন্য ভাসমান ড্রেজার দিয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
নগরঘাটা এলাকার মৎস্য চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, তার ৭ বিঘা মিঠা পানির ঘের তলিয়ে সব মাছ চলে গেছে এতে করে তার প্রায় ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া খলিষখালির নূরুল ইসলাম, তেঁতুলিয়া ফয়সাল হোসেন,মাগুরার পরিমল মন্ডল,তালা সদরের আসাদুজ্জামান জানান, তাঁরা সর্বশান্ত হয়ে গেছে। তাঁদের মাছের ঘেরের বেড়িবাঁধ এর উপর এখন তিন চার ফুট পানি সকল মাছ ভেসে গেছে।
তালা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ¯িœগ্ধা খাঁ বাবলি জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বেতনা নদীর বাঁধ ভাঙনের ফলে মূলতঃ এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমান জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পানি সরবরাহের সংযোগস্থল ও বিভিন্ন খালে নেট পাটা অপসারণ ও বাঁধ অবমুক্তির কাজ করে যাচ্ছেন। তবে তিনি এই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সর্বসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনকে এ বিষয়টি নিরসনের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মোঃ রাসেল মুঠোফোন মারফত জানান, এই উপজেলা দেশের উপকূলীয় এলাকা এখানে মুলত পলি মাটি জমাট হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আমার পক্ষ থেকে পানি সরবরাহের জন্য সে সমস্ত এলাকা বর্তমানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে,সেই প্রতিবন্ধকতা উচ্ছেদ অব্যহত রয়েছে। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়। এ বিষয়ে স্থায়ী সমাধান করতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ভূতপূর্ব সেচ, পানি উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয় সহযোগিতায় পলিমাটি অপসারণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আগামী উন্নয়ন সভায় তালা উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান।তবে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তিনি সার্বক্ষণিক কাজ করে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
Leave a Reply