স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি কর্মী এক ব্যবসায়িকে বাড়িতে ও থানা হাজতে নির্যাতনের অভিযোগে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখসহ পাঁচনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রবিবার কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের সাতহালিয়া গ্রামের মৃত সাঈদুর রহমানের ছেলে আসাদুর রহমান বাদি হয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক নয়ন বিশ্বাস মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন, কালিগঞ্জ থানার তৎকালিন উপপরিদর্শক মোঃ শহীদুল্লাহ, উপপরিদর্শক নয়ন চৌধুরী, উপজেলার বাগমারি গ্রামের অনিল মৃধার ছেলে হরিপদ মৃধা, মলেঙ্গা গ্রামের বরকতুল্লাহ গাজীর ছেলে আব্দুল গফুর গাজী।
মামলার বিবরণে জানা যায়, কালিগঞ্জের সাতহালিয়া গ্রামের বিএনপি কর্মী মোঃ আসাদুর রহমানের একই এলাকায় একটি ঔষধের দোকান রয়েছে। তার খালাত ভাই খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠণিক সম্পাদক। বাগমারি গ্রামের হরিপদ মৃধা ও মলেঙ্গা গ্রামের গফুর গাজী তার ঔষধের দোকান থেকে মাঝে মাঝে বাকীতে ঔষধ নিত। টাকা চাওয়ায় বিএনপি কর্মী বলে তাকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকিব দিত।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ৫ জুলাই তাকে পুলিশ দিয়ে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করায়। ২৫ জুলাই তিনি জামিনে মুক্তি পান। ২০১৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মোঃ শহীদুল্লাহসহ হরিপদ মৃধা ও গফুর গাজী তার বাড়িতে এসে তাকে মারিপট করে। এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ঘরের লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। উপপরিদর্শক শহীদুল্লাহ বলেন, এক লাখ টাকা চাঁদা না দিলে তোকে বিএনপি কর্মী হিসেবে নাশকতার মামলা দিয়ে জেলে পাঠাবো। তাকে ৬২ হাজার টাকা দেওয়ার পর উপপরিদর্শক নয়ন চৌধুরী বাকী টাকা কই বলে তাকে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে আসে।
এ সময় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ তাকে বলে যে, বাকী ৩৮ হাজার টাকা না দিলে তোকে নাশকতার মামলায় দেব। পরে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে উপপরিদর্শক শহীদুল্লাহ ও নয়ন চৌধুরী হ্যা-কাপ, লোহার রড ও লাঠি নিয়ে থানা হাজতের মধ্যে ঢোকে।
পরে তাকে হাতকড়া পরিয়ে দুই পা গামছা দিয়ে বেঁধে লোহার রড দিয়ে বাম কাঁধের কলার বন ও বাম পায়ের গোড়ালি ভেঙে দেওয়া হয়। থানা হাজত থেকে পুলিশ বেরিয়ে যাওয়ার পর আসামী হরিপদ মৃধা ও গফুর গাজী বাদির বাড়িতে ফোন দিয়ে বলে যে আসাদুজ্জামান থানায় আছে।
ওসি সাহেবকে দুই লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেবে। একপর্যায়ে বাদির ভাই আশরাফুল গাজী আসামী গফুর গাজীর মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা পাঠায়। এরপরও আসাদুজ্জামানকে কালিগঞ্জ থানায় ২০১৩ সালের ১৬ জুলাই দায়েরকৃত ২১ নং (জিআর-১৯০/১৩) মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে পাঠানো হয়। চার মাস ১৩ দিন পর বাদি জামিনে মুক্তি পায়।
এরপর উপপরিদর্শক শহীদুল্লাহ ও উপপরিদর্শক নয়ন চৌধুরী তাকে বলেন যে, সপ্তাহে দুইদিন করে থানায় হাজিরা দিবি। কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবি না। এ অবস্থা চলতে থাকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। একপর্যায়ে পাসপোর্ট করে ভারতে চিকিৎসা নেন বাম কাধের কলার বন ও বাম পায়ের গোড়ালি ভাঙার জন্য। পরিস্থিথি অনুকুলে থাকায় এখন বাদি এ মামলা দায়ের করেছেন। সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী এড. রফিকুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
Leave a Reply