আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ ডেস্ক: সাতক্ষীরা উপকূলবাসীর কাছে আতঙ্কের মাস মে। প্রতিবছর এই মাসের শেষে সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ে আইলা, ফণী, ইয়াস ও আম্পানের মতো প্রলয়ংকরী সব ঘূর্ণিঝড়। ভৌগোলিকভাবে সাতক্ষীরা জেলার জনপদ ও বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে সুন্দরবনের অবস্থান। বরাবরে মতো এবারও ঘূর্ণিঝড়ের প্রবাল তা-ব থেকে উপকূল রক্ষায় ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে সাতক্ষীরাকে বাঁচালো সুন্দরবন।
সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব ও পরিবেশবিদ অধ্যক্ষ আশেক-ই এলাহী বলেন, সুন্দরবন আমাদের উপকূলকে ঠিক মায়ের মতন বুকে আগলে রাখছে। ঝড়ের সময়ে সে নিজে ক্ষত-বিক্ষত হলেও উপকূলের তেমন ক্ষতি হতে দেয় না। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা উপকূলের জন্য সুন্দরবন যেন একটি দেয়াল। সুন্দরবনের জন্যই প্রতিবছর বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায় সাতক্ষীরা উপকূল। তবে এই সুন্দরবন রক্ষার জন্য কারোর কোন মাথাব্যথা নেই। তিনি সুন্দরবন রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত এক দশকে মে মাসে আটটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ৪ মে ঘূর্ণিঝড় ফণী, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালের ২৬ মে ইয়াস। এ ছাড়া ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরা ও ২০১৩ সালের ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হানে। তবে এই দশকে সুন্দরবন সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিডরে।
রোববার রাতে সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপকূলজুড়ে তা-ব চালায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল। তবে প্রবল শক্তির এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব উপকূলে সেভাবে পড়তে পারেনি সুন্দরবনের কারণে। বনে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার ছিল, সেটা বন পার হয়ে লোকালয়ে যেতে যেতে শক্তি হারিয়ে দমকা বাতাসে রূপ নেয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া জলোচ্ছ্বাস লোকালয়ে পৌঁছানোর আগে সুন্দরবনে বাধাগ্রস্থ হওয়ায় ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক কমে যায়। এ কারণে উপকূলীয় এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি বা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তেমন থাকে না।
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) একেএম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী ধারণা করছেন এবারের ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্য প্রাণীদের ওপর বড় ধরণের কোন প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। কেননা সুন্দরবনে যে সময়টায় জোয়ার হয়, সে সময়ে ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেনি। যার কারণে এবার পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চাইতে খুব একটা বেশি ছিল না। তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে এবারে বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি তেমন একটা হয়নি। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি প্রবল বেগে সুন্দরবনে আছড়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় গাছপালা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বন কর্মকর্তারা। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সুন্দরবনে জরিপ চালিয়ে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলি বলেন, সোমবার সকাল থেকে আশঙ্কা মুক্ত উপকূলীয় এলাকা। নতুন করে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবন নেই বলে তিনি জানান। অপরদিকে, সোমবার (২৭ মে) উপকূলীয় এলাকার পরিদর্শন শেষে নিজের পর্যবেক্ষণ থেকে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকীও মনে করেন সুন্দরবনের কারণেই বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এর কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে সাতক্ষীরা উপকূল। এই সুন্দরবন না থাকলে সাতক্ষীরা উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে বড় ধরণের তা-ব হতে পারতো বলে তিনি মনে করেন। বনে যত্রতত্র গাছ কাটা ঠেকাতে ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বনের নিরাপত্তা বাড়ানো, সেইসঙ্গে বনায়নের জন্য বেশি বেশি গাছ লাগানোর সুপারিশ করেছেন উপকূলবাসী।
Leave a Reply