নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার তালা-কলারেরায়া উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ২১টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ হবে। এর মধ্যে ইভিএমে ৪ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ করা হবে। সোমবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহন না করায় আওয়ামী লীগ,জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদন্দিতা করছেন। তবে কোন কোন ইউনিয়নে বিএনপি ও জামায়াত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায় জেলার ২১ টি ইউনিয়নের মধ্যে কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ও তালা উপজেলার তালা সদর, খলিলনগর ও তেঁতুলিয়া এই চারটি ইউনিয়নে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বাকি ইউনিয়নে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। তবে অনেকেই বলছেন ইউপি নির্বাচন উৎসবের আমেজ ছড়ালেও ভোট গ্রহণের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে বাড়ছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। দুই উপজেলার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত করে (নৌকা প্রতীক) বরাদ্ধ দিলেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলের একাধিক নেতা স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠ দখলে রেখেছে। আর একই দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় উৎসবের নির্বাচন রূপ নিতে পারে সংঘর্ষের দিকে। নির্বাচন কমিশন থেকে ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠান এই ঘোষণার সাথে সাথে মিছিল মিটিং ও গণসংযোগ শুরু করে প্রার্থীরা। এসময় আধিপত্য বিস্তর ও আধিপত্য বজায় রাখার জন্য দলীয় প্রার্থীর নেতা কর্মীদের সাথে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের হামলা পাল্টা হামলা নির্বাচনী কার্যালয়সহ প্রচার মাইক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তালা ও কলারোয়া নির্বাচনি বিবাদে জড়িয়ে ইতি মধ্যে একাধিক মামলাও দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় প্রার্থীদের অনেকেই কারা ভোগ করে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখেছেন। প্রতিদিনই তালা কলারোয়ায় নির্বাচনি সহিংসাতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ম‚লত পছন্দের প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে বেশী আশাবাদি কর্মী সমর্থকরা মাঠ দখলে রাখতে বিবাদে জড়াচ্ছে। আবার পারজয়ের ভয়ে ভোটাদের চাপে রাখতে কেউ কেউ আগে বাড়িয়ে সহিংসতা করছে। এদিকে নির্বাচনের শান্তি প‚র্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নাওয়া খাওয়া ফেলে ছুটে বেড়াচ্ছেন প্রত্যান্ত এলাকার প্রতিটি গ্রাম। হানাহানি ছাড়াই ভোট উৎসব শেষ করতে যেন ঘুম হারাম হয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটা সদস্যের। দুই উপজেলার বিট পুলিশের কর্মকর্তারা প্রত্যেক প্রার্থীদের উপর সকর্ত নজরদারিসহ আইন ভঙ্গকরা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুশিয়ারী বার্তাও পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের কাছে। এলাকার সাধারণ ভোটাররা জানান, ইউপি নির্বাচন নিয়ে তারা আতঙ্কিত। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়ে থাকায় কে কাকে ভোট দিবে তা ঠিক করতে পারছে না। ভোটের পরিবেশ ভয় হীন না হলে তারা শেষ মেশ ভোট কেন্দ্রেই যাবেন না। সাতে পাঁচে নেই এমন সব খেটে খাওয়া সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাবে কি যাবে না তা নিয়ে দো’টানায় ভ‚গছে। কলারোয়ায় গড় হিসাবে একজন দলীয় প্রার্থীর (নৌকা প্রতীক) বিপক্ষে প্রায় ৪ জন স্বতন্ত্র বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করছেন। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ভোটের প্রচার প্রচারণা। আজ সকাল ৮টা হতে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তালা ও কলারোয়া উপজেলার ২৪ টির মধ্যে ২১ টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হবে ইউপি নির্বাচন। এর মধ্যে কলারোয়া ২ টি ও তালায় ৩ টি ইউনিয়নে প্রথম বারের মতো ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে।
কলারোয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনোরঞ্জন বিশ্বাস নক্ষত্র নিউজ২৪ এই প্রতিবেদককে জানান, উপজেলার (১০ইউপিতে) জয়নগর, জালালাবাদ, কয়লা, লাঙ্গলঝাড়া, কেঁড়াগাছি, সোনাবাড়িয়া, চন্দনপুর, হেলাতলা, দেয়াড়া ও যুগিখালী, ইউনিয়নে হবে ইউপি নির্বাচন। এতে চেয়ারম্যান পদে ৩৮ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৮৫ জন, এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য ১২৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন। ২০শে সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের ৯১টি কেন্দ্রে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৪৭০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭১৭৭৪ টি এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ৭২৬৯৬ টি। তিনি আরো বলেন কোন প্রার্থী নির্বাচনে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালা উপজেলার ধানদিয়া, নগরঘাটা, সরুলিয়া, তেঁতুলিয়া, তালা সদর, ইসলামকাটি, খলিষখালি, মাগুরা, খেশরা জালালপুর ও খলিলনগর, ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে ১১ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৩ জন প্রার্থী মাঠে আছেন। যার গড় হিসাবে প্রতি ইউনিয়নে আ.লীগর দলীয় প্রাথীর্র (নৌকা প্রতীক) বিপক্ষে ৩ জন করে প্রার্থী জয়ের জন্য লড়াই করছেন। এলাকার ভোটারা জানান, নির্বাচন ঘিরে তালায় প্রার্থীদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। নৌকার একজন প্রর্থীর বিরুদ্ধে একাধিক প্রার্থী। দলীয় এসব বিদ্রোহীদের দমন করা না গেলে ফলাফলের হিসেব গরমিল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তালা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাহুল রায় জানান, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে সুষ্ঠু ও শান্তিপ‚র্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তালা উপজেলায় এই প্রথম ৩ টি ইউনিয়নে ইলেকটোরাল (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোট নেয়া হবে। ইউনিয়ন ৩টি হলো তালা সদর, খলিলনগর ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রতিটি কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ আনুষঙ্গিক সব ব্যবস্থার করা হয়েছে। নির্বাচনে কোন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তালায় ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৩ প্রার্থী, সাধারণ সদস্য পদে ৪৪৫ এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৩৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নে ২ লাখ ৩০ হাজার ৮২৪ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে ধানদিয়া ১৭২৩৭ জন, নগরঘাটা ১৫২৫৩ জন, সরুলিয়া ৩০০৫৫ জন, তেঁতুলিয়া ২০৭৫৩জন, তালা সদর ২৬৫৮৩ জন , ইসলামকাটী ১৬৭৩৯ জন, মাগুরা ১৭৩৫৫ জন, খলিষখালি ২১০৯৫ জন ,খেশরা ২২০৬২ জন , জালালপুর ১৯২২১ জন ও খলিলনগর ২৪৪৭১ জন।
সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল কবির জানান, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার পাশাপাশি ৫ জনকে পুলিশ সদস্য ১৭ জন এবং আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন বিধি-নিষেধ রক্ষার্থে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের টিম মাঠে থাকবে। এছাড়াও আইশৃংখলা রক্ষার্থে বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা মঠে কাজ করবে। সাতক্ষীরার তালা ও কলারেরায়া উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৯৪ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। দু’টি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ৮১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নির্বাচনে শান্তিপ‚র্ণ পরিবেশ থাকবে। কোন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে, আইনের ব্যত্যয় ঘটালে বা চেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তালা ও কলারোয়া নির্বাচন ঘিরে সাহিংসতা রোধে পোশাক ধারি পুলিশের পাশা পাশি সাদা পোশাকেও পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের প‚র্বের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোট অনুষ্ঠানের কথা ছিল গত ১১ এপ্রিল। কিন্তু কোভিড-১৯(করোনা ভাইরাস) প্রাদুর্ভাবের কারণে ভোট স্থগিত করা হয়। পরে ভোটের তারিখ পুনর্নিধারণ করে ২১ জুন করা হয়। সেই নির্ধারিত সময়রে মধ্যে কভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সারা দেশে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। প‚র্বের সেই স্থগিত নির্বাচন আজ ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
Leave a Reply